শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিলকান্দি (আংগারিয়া) গ্রামের কুদ্দুস সরদারের পুত্র সজীব সরদারকে (১৯) পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ রাতে নির্মমভাবে গলাাকেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বিত্তরা। এ বিষয়ে নিহতের পিতা কুদ্দুস সরদার অজ্ঞাত আসামীর নামে পালং মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পালং মডেল থানা পুলিশ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুনীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। খুনীরা হত্যার পরিকল্পনা ও দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা অনুযায়ী প্রথমে পুলিশের কাছে পরে ১৬৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতার নামও প্রকাশ পায়।
এরপর থেকে পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা নিলকান্দি গ্রামের হাফেজ হাফিজুর রহমান মল্লিকের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার গ্রেফতার এড়াতে গাঁ ঢাকা দেয়। দীর্ঘদিন পর গত ২৮ আগষ্ট পরিকল্পনাকারি মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে। আদালত আসামীর জামিনাবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, অপরাপর সহযোগী আসামী গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর রূপু কর হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতা মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ২৯ আগষ্ট আদালতে আবেদন করেন। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করেছে আদালত। ইতোমধ্যে আসামীর জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে ফৌজদারী মিস-৯২৩/২০১৮ নম্বর কেস করেছে আসামী পক্ষের আইনজীবী। সজীব হত্যার পরিকল্পনা ও অর্থযোগাতাকে বাঁচাতে গত বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত হয় মামলার বাদী ও নিহত সজীবের পিতা কুদ্দুস সরদার।
বাদী কুদ্দুস সরদারের দাখিলকৃত আবেদন থেকে জানা গেছে, একই এলাকার মতিউর রহমান মুন্সীর সাথে তার জমি নিয়ে বিরোধ। তাই মতিউর রহমান মুন্সী বাদী ও তার পরিবারকে বিরোধীয় জমি থেকে উচ্ছেদ করতে সজীব সরদাকে হত্যা করেছে। এ হত্যা কান্ডের সাথে অন্য কারোর সম্পৃক্ততা নাই।
স্থানীয়দের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, কুদ্দুস সরদার ভূমিহীন। সরকারী জমিতে (ডিসিআর লিজে) বাৎসরিক খাজনা দিয়ে বসত বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। কুদ্দুস সরদার একজন রিক্সা চালক। দিন আনে দিন খায়। বিগত দিনে বাপ-পুত্র রোজগার করেও বস্তায় বস্তায় চাল আনতে পারেনি। বিগত ৫০ বছরের পুরাতন জরাজির্ণ ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করত কুদ্দুস সরদার। ছেলে সজীব হত্যার পর কুদ্দুস সরদার একসাথে ৩ বস্তা চাল কিনে। নতুন টিনে ঘর নির্মাণ করে। ছেলের মৃত্যুর পররবর্তী শোকাহত পিতার কাজ কর্মে অনিহা আসে। আয় রোজগার কমে যায়। কুদ্দুসের বেলায়ও তাই হয়েছে। তাহলে নতুন ঘর নির্মাণের টাকা আসে কোথা থেকে। বস্তায় বস্তায় চাল ও মাসের সওদা এক সাথে কিনতে হাজার হাজার টাকার দরকার। সেই টাকাইবা কোত্থেকে পায় কুদ্দুস। এলাকাবাসীর ধারণা, মতিউর রহমান মুন্সীকে ফাঁসাতে ছেলে সজীব হত্যার পরিকল্পনায় কুদ্দুসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এখন হত্যাকান্ডের মূল আসামীদের সাথে আতাত করে কুদ্দুস বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হতে চলছে। ছেলে হত্যার পর কুদ্দুসের ভাগ্য খুলে গেছে। হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটনের জন্য মামলার বাদী কুদ্দুস সরদারকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে রহস্যের জট খুলবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর রূপু কর বলেন, মামলার ধৃত আসামী রেজাউল হক বেপারী ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারানুয়ায়ী স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারের নাম প্রকাশ পায়। তদন্তকালে জানাগেছে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার গত ২১ মার্চ তারিখে পরিকল্পনা করে মতিউর রহমান মুন্সীকে সায়েস্তা করার জন্য অত্র মামলার বাদীর ছেলে সজীব সরদারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কারণ মতিউর রহমান মুন্সীর সাথে আসামী মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারের দীর্ঘদিন যাবৎ বসত বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ ও মামলা চলছে। একই সাথে নিহতের পিতা কুদ্দুস সরদারের সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দ¦ ছিল। মতি মুন্সীকে সায়েস্তা করার জন্য আসামী মোস্তাফিজুর রহমান কাওছার সহযোগী আসামীদের নিয়ে টাকার চুক্তিতে বাদীর ছেলে সজীব সরদারকে হত্যা করেছে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলা সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাপর সহযোগী আসামীদের পরিচয়, গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে মোস্তাফিজুর রহমান কাওছারকে পুলিশ হেফাজতে আনিয়া ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাই ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছি।
শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সিনিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মীর শাহাবুদ্দিন উজ্জল বলেন, আসামীর জামিনের বিষয়ে বাদী আদালতে উপস্থিত হয়ে অনাপত্তি দিতে পারে না। আসামী পক্ষের আইনজীবী বাদীকে আদালতে উপস্থাপন করছে। এটা আইন পারমিট করে না। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পিপি সাহেব আপত্তি করে বলেছে, ‘আপনি যদি বাদি হয়ে থাকনে তাহলে আমার কাছে আসবেন। আদালতকে কিছু বলার থাকলে আমি সুযোগ করে দিব’। বাদি যা করেছে তা বে-আইনী।
মামলার বাদী কুদ্দুস সরদার বলেন, আমার ছেলেকে কে খুন করেছে তা আমি যানি। খুনীদের আসামী করে মামলা করেছি। পুলিশ তাদের ধরে না। কাওছারকে মামলার আসামী করিনি তবুও পুলিশ কাওছারকে রিমান্ডে নিতে চায়। কাওছারের জামিনের বিষয়ে আমি জজের সামনে যাই। জজ সাহেব আমার কোন কথা শুনেনি। আমি পুলিশের কাছে আবেদন করছি মামলার আসামী মতি মুন্সী প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। তাকে যেন গ্রেফতার করা হয়।