
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জেলা পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম দেখভাল ও সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করতে ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
সচিবরা প্রয়োজনে নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন। নিজ জেলা শরীয়তপুর জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান মো. আনিছুর রহমান।
প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তা প্রশাসনে একজন পেশাদার ও সদালাপী কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। কর্মজীবনে নানা চড়াই-উতরাই মোকাবেলা করেও তিনি নিজের মৌলিক অবস্থান থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। বিগত বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি অনেকটা প্রকাশ্যে সোচ্চার ছিলেন। সে সময় একটি বড় ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় তিনি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবাদও করেন। এ জন্য তাকে নানাভাবে হেনস্তা হতে হয়। কিন্তু কোথাও আপস করেননি।
তিনি এখন পর্যন্ত যেসব স্থানে দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানে এ ধরনের নীতি-নৈতিকতা অনুসরণ করেছেন। দ্রুত ফাইল নিষ্পত্তি করা ছাড়াও তিনি সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষকে সব সময় হয়রানিমুক্তভাবে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়া যে ফাইল যে পর্যায়ে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা সেই ধাপে নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে অটল থাকেন। এ রকম নানা কারণে তিনি প্রশাসনে একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।
মো. আনিছুর রহমান শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬২ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরহুম আলহাজ সিরাজুল হক মোল্লা ও মরহুমা জরিনা বেগমের ছোট ছেলে।
মো. আনিছুর রহমান চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চাঁদপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ হতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৮৫ ব্যাচের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য হিসেবে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে তিনি সহকারী কমিশনার, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, অর্থ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। উপ-সচিব হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির পর স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।
মো. আনিছুর রহমান ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাঁকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি মো. আনিছুর রহমানকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব করা হয়।
মো. আনিছুর রহমান সরকারি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ভিয়েতনাম, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালী, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, রাশিয়া, ফিলিপাইন, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, তুরস্ক, নরওয়ে, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রেনেডা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মালাওয়ি, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল ও সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।
সচিব মো. আনিছুর রহমানের স্ত্রী সালমা সুলতানা রূপালী চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের সাবেক এমপি মরহুম এম সফিউল্যাহ’র বড় মেয়ে। তাঁদের এক মেয়ে (রুশনা অরিত্রি অর্পা) ও এক ছেলে (তারিত সাক্ষাত অর্পন)।