
শরীয়তপুর সদর উপজেলার গয়ঘর খলিফাকান্দি গ্রামে প্রবাসী দাদন খলিফার (৩০) খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। গয়ঘর খলিফাকান্দি গ্রামীণ সড়কে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভে বাবা, মা, স্ত্রী, ভাই বোন সহ সর্বস্তরের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। এ সময় তারা এসকান্দার সরদারের নেতৃত্বে হত্যাকারী ইদ্রিস খান, বাচ্চু মাদবর, আবুল খান, শুকুর বেপারী, রশিদ খলিফা, আজিত খলিফা গংদের ফাঁসি দাবি করেন।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর গত দুই মাস পূর্বে দেশের বাড়ি আসেন দাদন এবং খুন হওয়ার সতের দিন পূর্বে বিয়ে করেন। করোনার মহামারির কারণে নববধূকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাড়ি আনার পূর্বেই ঘাতকেরা কেড়ে নেয় দাদনের প্রাণ। স্বামী হত্যার খবর পেয়ে প্রথমবার স্বামীর লাশ দেখতে শ্বশুড় বাড়ি আসেন নববধূ নিশি আক্তার।
এলাকাবাসীর সাথে স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন নববধূ নিশি। এ সময় তিনি বলেন, বিয়ের পরে স্বামীর বাড়ি না যেতেই আমাকে বিধবা হতে হয়েছে। যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। খুনিদের ফাঁসি চাইতে চাইতে নিশি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় লোকজন তাকে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে যান।
দাদনের বাবা সেকান্দার খলিফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে অল্প কিছুদিন হয় দেশে এসে বিয়ে করেছে। ছেলের বউ এখনও বাড়িতে আনতে পারি নাই। তার আগেই ঘাতকেরা আমার ছেলেকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আজকে ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে আমাকে রাস্তায় দাড়াতে হয়েছে। এ কষ্ট আমি কেমন করে সইবো। আমি আমার ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই।
ছেলে খুন হওয়ার পর থেকেই মা আমেনা বেগম ছেলের শোকে পাগলপ্রায়। সে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে দিন রাত শুধু বিলাপ করে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সাথে মা আমেনা বেগমও এসেছিলেন ছেলে হত্যার বিচার চাইতে। এ সময় আমেনা বেগম বিলাপ করে বলেন, আমার ছেলে কি দোষ করেছিল? কেন আমার বুকের মানিক আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হলো। আমার বুক যারা খালি করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। যাতে এই খুনিরা আর কোন মায়ের বুক খালি করতে না পারে।
বোন পারভীন ও পারুল বলেন, আমরা আমাদের ভাইয়ের খুনের বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই। আর কিছু চাইনা।
গত ১৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার গয়ঘর খলিফাকান্দি গ্রামে তারাবি নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রবাসী দাদন খলিফাকে ফসলি জমিতে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত দাদন খলিফা ওই গ্রামের সেকেন্দার খলিফার ছেলে। সে শৌলপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, দাদনকে যারা হত্যা করেছে তারাই ১৯৯৭ সালে তার এক ফুফুকে হত্যা করেছিলেন। খুনিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনও সেই খুনের বিচার পায়নি তারা।
দাদনের চাচতো ভাই রাজ্জাক খলিফা বলেন, ‘ইদ্রিস খান ও তাঁর ভাইয়েরা ২৪ বছর পূর্বে আমার এক ফুফুকে হত্যা করে। সেই বিচার পাইনি। বিচার না হওয়ায় তাঁরা ২৪ বছর পর আবার তারা আমার চাচতো ভাই দাদনকে কুপিয়ে হত্যা করল। দাদন দুই মাস আগে দেশে আসে। ১৭ দিন হয় তাঁকে বিয়ে দিয়েছি, করোনার কারণে এখনো বউ বাড়িতে তুলে আনতে পারিনি। স্বামীর ঘরে আসার আগেই তার বউ বিধবা হলো। এ হত্যার পরিকল্পনাকারী ও ইদ্রিসদের প্রশ্রয়দাতা এসকান্দার সরদার। আমরা তাদের বিচার দাবী করছি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আখতার হোসেন বলেন, এলাকায় আধিপত্য ও পুর্ব শত্রুতার জেরে খুন হন প্রবাসী দাদন খলিফা। এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে নিহতের বাবা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ পর্যন্ত একজন আসামীকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।