মঙ্গলবার, ৩০শে মে, ২০২৩ ইং, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ই জিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী
মঙ্গলবার, ৩০শে মে, ২০২৩ ইং

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ফাতেমাকে কোদাল দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ফাতেমাকে কোদাল দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ

শ্বশুর-শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে ফাতেমা (৩০) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুরে।

ফাতেমা ওই গ্রামের প্রবাসী চানমিয়া ফকিরের স্ত্রী। চামনিয়া ফকির প্রবাসে থাকার সুযোগে প্রায় এক বছর যাবৎ শ্বশুর শ্বাশুড়ি তাকে নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ গৃহবধূ ফাতেমার। কয়েক দফা নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালাও লাগিয়ে দেয় শ্বশুর আবু বকর ফকির ও শ্বাশুড়ি রিজিয়া বেগম। এ নিয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘরের তালা খুলে ওই গৃহবধূকে তার ঘরে উঠিয়ে দিয়ে আসে পালং মডেল থানা পুলিশ। এর পরও নাকি ওই গৃহবধূকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন বন্ধ করেনি তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি। গত বৃহস্পতিবার শ্বাশুড়ি রিজিয়া বেগম সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ফাতেমাকে কোদাল দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পালং মডেল থানার পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখেন।

১৪ এপ্রিল শুক্রবার সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে আবু বকর ফকির ও তার স্ত্রী রিজিয়া বেগমকে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা বাড়ি থেকে সটকে পড়ে।

কথা হয় গৃহবধূ ফাতেমার সাথে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১০ বছর হয় আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাকে ঢাকায় আমার চাচার বাসায় রেখে স্বামী চানমিয়া ফকির বিদেশ চলে যান। আমি ঢাকায় চাচার বাসায় থেকে একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। এক বছর হয় স্বামী-স্ত্রী দুজনের টাকায় শ্বশুর শ্বাশুড়িতে একটি ঘর তুলে বসবাস শুরু করি। প্রায় আট মাস আগে স্বামী চানমিয়া দেশে আসেন এবং কয়েক মাস থেকে আবার বিদেশ চলে যান। স্বামী বিদেশ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত কামাই রোজগারের সমস্ত টাকা শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাছে পাঠিছে। স্বামী দেশে এসে টাকা দিয়ে কি করা হয়েছে জানতে চাইলে এ নিয়ে বাড়িতে গ্যাঞ্জাম হয়। এরপর থেকে স্বামী তাদের টাকাপয়সা না দেয়ায় তারা আমার ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। তারা আমাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আমার ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। তথন আমি বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমি আমার ঘরে ফিরি। এরপরও তারা আমার ওপর শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার বন্ধ করেনি। আমি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত বৃহস্পতিবার শ্বাশুড়ি রিজিয়া বেগম আমাকে কোদালের বাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। তারা চায় আমি খালি হাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমি আমার ঘরের মালামাল নিয়ে ভাড়া বাসায় চলে যেতে চাইলেও তারা আমার মালামাল নিতে দিচ্ছেনা। আমি আমার গর্ভের সন্তান নিয়ে উদ্বীগ্ন। প্রশাসনের কাছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

বিদেশ থেকে চানমিয়া ফকির মোবাইল ফোনে বলেন, আমার চাচা আবুল বাশার ফকিরের ইন্ধনে তারা আমার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পায়তারা করছে। আগের স্ত্রীকেও তারা মেরে বাড়ি ছাড়া করেছে। আমি আপনাদের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।

আবুল বাশার ফকির বলেন, গৃহবধূ ফাতেমার অভিযোগ সঠিন নয়। সে উল্টো তার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে খারাপ আচরণ করে। আবু বকর ফকির জমি বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছে। এখন সেই ছেলে টাকাও দেয়না, বাবা-মায়ের খবরও নেয়না। উল্টো তার বাড়িতে থেকে তাদের সাথেই খারাপ ব্যবহার করছে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগেও ওই গৃহবধূ ফাতেমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। তখন পুলিশ গিয়ে তালা খুলে ওই গৃহবধূকে ঘরে তুলে দিয়ে আসে। গত বৃহস্পতিবার আবারও মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যান। ওই গৃহবধূ মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


error: Content is protected !!