
শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে কোনো রসিদও দেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, বোর্ডের নিয়মে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফরম পূরণে ১ হাজার ৩৮৫ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৪১৫। এছাড়া মানবিক বিভাগ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১ হাজার ২৯৫ টাকা এবং উভয়ের কেন্দ্র ফি বাবদ ৩৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো রসিদ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৬২০ টাকা ও বিজ্ঞান বিভাগে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৭৭০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এমনকি প্রবেশপত্র নেয়ার সময় বাণিজ্য করা হতে পারে বলেও জানা যায়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য স্কুল থেকে তিনটি বিভাগে ২৫৮ জন শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এতে ১১৭ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের পূণরায় পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণ করা হয়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, এসএসসি ফরম পূরণে স্কুলের স্যারেরা তিনগুন টাকা নিয়েছে। টাকা আদায়ের কোনো রসিদও দেয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, অভাবের সময় কষ্ট করে মেয়েদের পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণে টাকা দিয়েছি। যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দেয়ার মতো। অতিরিক্ত টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
টাকা উঠানোর দায়িত্বে থাকা ইংরেজি শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, যারা পাশ করেছেন তাদের কাছে টাকা নেয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষকরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মোতাবেক ফরম পূরণে টাকা নেয়া হয়েছে। কোনো বাড়তি টাকা নেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, পাশের বয়েজ স্কুলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মডেল টেষ্টের জন্য ৬০০টাকা, অতিরিক্ত কোচিং-এর জন্য ২ হাজার টাকা। এই ২ হাজার ৬০০ টাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে নেয়া হয়েছে। আর সরনিকা, মিলাদ, বিদায় অনুষ্ঠান ও যাতায়াতের জন্য ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলায় দুইটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একটি শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। যা শরীয়তপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। কিন্তু শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি ফরম পূরণে টাকা অতিরিক্ত নিলেও পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর উল্টো।
পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, তাদের কাছ থেকে এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি। বোর্ডে যেই টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই নিয়েছেন।
পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এমারত হোসেন মিয়া বলেন, ১৯৯ জন শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। ১৯৭ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি অনুযায়ী তাদের ফরম পূরণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হেলীম ফকির বলেন, এ ধরনের অভিযোগ জানা নেই। তবে জেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো জেলা প্রশাসকের আন্ডারে চলে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। জেলাা প্রশাসক স্যারে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাৎক্ষনিকভাবে শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মোবাইলে বলে দিয়েছি কোন ভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আরও বলে দিয়েছি, টাকা নেয়ার সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের রসিদ দিয়ে দিবেন।