শনিবার, ১০ই জুন, ২০২৩ ইং, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২১শে জিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী
শনিবার, ১০ই জুন, ২০২৩ ইং

পুরো পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হওয়ায় বাধ ভাঙ্গা উৎসবে শরীয়তপুরবাসী

পুরো পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হওয়ায় বাধ ভাঙ্গা উৎসবে শরীয়তপুরবাসী

৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে যুক্ত হয়েছে পদ্মা নদীর দুই প্রান্ত। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো। এমন কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে পদ্মার পাড়ে ভিড় করেছেন হাজারো মানুষ। কিন্তু করোনার কারণে বাড়তি সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পদ্মা সেতু পুরো দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকেই উপস্থিত দর্শনার্থীদের মধ্যে বিশেষ উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতিহাসের অংশ হওয়ার জন্য অনেকেই আসছেন পদ্মায়। পদ্মার দু’পাড়ের এ সেতু বন্ধনকে ঘিরে পদ্মা পাড়ের মানুষগুলো আনন্দে উদ্বেলিত। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মধ্যে এ ভালো লাগা কাজ করছে। কারণ এই সেতু চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষসহ গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হবে। জাতীয় অর্থনীতির চাকায় গতি বাড়বে। বিকাল থেকেই দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসব আর আমেজ দেখা গেছে, তারা হাতে বেলুন আর নানা রঙ্গের পোষাক পরে এখানে উপস্থিত হয়। সন্ধায় রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা বেলুন উড়ানো, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও আতশবাজির মধ্য দিয়ে আনন্দ উল্লাসের আয়োজন করে শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেস ওয়ে জিরো পয়েন্টে। পদ্মা সেতুর স্প্যান নদীর দুই প্রান্তে যুক্ত হওয়াতে খুশি নদীর দক্ষিণ পারের মানুষ।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু’র আয়োজনে স্থানীয় মহব্বত খান ও বাবুল আকনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই মোমবাতি প্রজ্জলন আতশবাজি ও বেলুন উড়ানোর আয়োজন করা হয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ৪২ টি পিলারের উপরে ৪১ টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হওয়ায় তাদের এই উল্লাস। শরীয়তপুর বাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে পদ্মা সেতু বড় ভূমিকা রাখবে এমনটি আশা করছেন আনন্দে উল্লাসিত সর্বস্তরের মানুষ। শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের এক্সপ্রেস ওয়ে জিরো পয়েন্টে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত এ আনন্দ উল্লাস করেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান উপস্থিত সকলে।

শরীয়তপুর ডামুড্যা থেকে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো দেখতে এসেছেন স্বপ্ন। স্প্যান বসানো দেখতে যাওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, সকাল সোয়া ১০টার দিকে ‘নিরাপত্তার জন্য কাছে যেতে পারছিলেন না। কিন্তু নদীর তীরে দাঁড়িয়েও যে আনন্দ লাগছে, তা বোঝাতে পারব না। আমরা অপেক্ষায় আছি সেতু ব্যবহার করে কবে ঢাকা থেকে বাড়ি পৌঁছাব।’

জাজিরা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মহব্বত খান জানান, পদ্মা সেতুতে ৪১ তম স্প্যান উঠার পর পুরো সেতু দৃশ্যমান হলো এতে শুধু শরীয়তপুরবাসী খুশি না, পুরা দক্ষিণবঙ্গের সবাই খুশি। পদ্মা নদী উত্তাল খরস্রোতা নদী, রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার সময় নৌযানের কারণে অনেক সময় রোগী মারা যায়, পদ্মাসেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যখন যান চলাচল করবে তখন আর এ সমস্যা থাকবে না। আমরা যেমন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কাছে ঋণী, আজ পদ্মা সেতু পুরো দৃশ্যমান হওয়াতে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির ঋণী হয়ে থাকলো শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ।

শরীয়তপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন মুন্সি বলেন, ‘যেদিন পদ্মার বুকে প্রথম স্প্যান বসেছিল, সেদিন সেটার সাক্ষী হয়েছিলাম। সেদিন খুবই আশাবাদী ছিলাম আমরা পারব, বিজয় আমাদের হবেই। আজ শেষ স্প্যান বসেছে। দুই প্রান্ত যুক্ত হয়েছে, বিজয়ের মাসে এমন স্বপ্ন বিজয় হবে ভাবতে পারিনি।’

জাজিরা উপজেলার চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার বলেন, পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে শরীয়তপুরের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। এ অঞ্চলের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির ঋণী।


error: Content is protected !!