শনিবার, ১০ই জুন, ২০২৩ ইং, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২১শে জিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী
শনিবার, ১০ই জুন, ২০২৩ ইং

ঝুঁকি নিয়ে নড়িয়ায় রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যোদ্ধা চিকিৎসক দম্পতি

ঝুঁকি নিয়ে নড়িয়ায় রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যোদ্ধা চিকিৎসক দম্পতি

জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ডা. খালেদ শওকত আলী ও ডা. তানিয়া খালেদ দম্পতি। করোনা সংক্রমণ দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় পুরো জাতি উদ্বিগ্ন। দেশের মানুষকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে অনেক চিকিৎসক এবং মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকে। এমন ঝুঁকির মধ্যেও থেমে নেই তাদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ৭১ ফাউন্ডেশন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, মহাখালী সপ্তাহে ৪ দিন চেম্বার করে এবং শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা শহরে অন্যতম প্রাইভেট চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ‘মাজেদা হাসপাতালে প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন তারা। করোনার এ সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোগী দেখে যাচ্ছেন এবং অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বিনামূল্যে।

ডা. খালেদ শওকত আলীর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা, শরীয়তপুর-২ আসনের ৬ বারের সাবেক এমপি, সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার অভিযুক্ত (কর্ণেল-অবঃ) শওকত আলী ও মা বীর মুক্তিযোদ্ধা মিস মাজেদা শওকত আলী বঙ্গবন্ধু’র ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের উপহার দিয়েছেন। আজ দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে করোনা প্রতিরোধে প্রথম সারির যোদ্ধা হয়ে দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দিন রাত মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন মেডিসিন ও ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ শওকত আলী ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. তানিয়া খালেদ দম্পতি। শুধু চিকিৎসা সেবা দিয়েই থেমে নেই তারা। করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আক্রান্ত শুরু হওয়ার পর থেকে নড়িয়া-সখিপুরের অসহায় দুস্থ পরিবারের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, ঈদ সামগ্রী, স্বাস্থ্য উপকরণ ও সচেতনতা জন্য লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন এই চিকিৎসক দম্পতি।

ডা.তানিয়া খালেদ বলেন, করোনা ভাইরাসের রোগ সংক্রান্ত এ দুর্যোগকালে দায়িত্ব পালন করছি পেশার দায় থেকে কোনো প্রাপ্তির আশায় নয়। এ সময়ে সাধারণ রোগীদের কথা আমাদের ভাবতে হচ্ছে। তিনি জানান, মানবসেবার ব্রত নিয়ে এ পেশায় এসেছি। এ পেশা সংগ্রামের পেশা। কোন প্রাপ্তির আশায় নয়, সেবার মানসিকতা থেকে এ দায়িত্ব পালন করছি। দেশের এমন মহাসংকটকালে সংগ্রামী পেশার মানুষ হিসেবে পালিয়ে থাকলে রক্ষা পাওয়া যাবে না। পুরো পৃথিবী করোনা ভাইরাস নামের অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। এ যুদ্ধে আমাদের দেশকে জয়ী হতে হবে।

এ চিকিৎসক দম্পত্তি ২৪ ঘণ্টাই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা সংকটের এই চরম পর্যায়ে এসেও থেমে নেই তাদের স্বাস্থ্য সেবা। তারা নিয়মিত এ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা ছাড়াও মোবাইল এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকির মধ্যে তাদের এমন দায়িত্ব পালনে পরিবারের লোকজনও ঝুঁকিতে আছেন।

এমন সংকটকালে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ডা. খালেদ শওকত আলী জানান, মানবসেবা ব্রতের এই পেশার সৈনিক আমরা। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এমপি ও মা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীস মাজেদা শওকত আলী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরাও বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যথাসম্ভব সচেতন থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও নিজের ফেইসবুক প্রোফাইল ও লোকাল কয়েকটি ফেইসবুক গ্রুপে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচারণা, অসহায় ও দুস্থ পরিবারের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।

তিনি আরো বলেন, পেশায় আমরা চিকিৎসক। সংকটকালেই চিকিৎসকের যুদ্ধ। এমন যুদ্ধে চিকিৎসকের জয়ী হতে হয়। কোনো রোগী মারা গেলে চিকিৎসকের পরাজয়। এমন সংকট থেকে পালিয়ে থাকলেও পরাজয়। পালিয়ে আমাদের বাঁচার চেষ্টা থাকলে সাধারণ রোগীরা যাবেন কোথায়? তাদের সেবায় অন্তত শপথের দায়বদ্ধতা থেকে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। সবাই সচেতন থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।


error: Content is protected !!