
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ভয়াল পদ্মার ভাঙ্গণে নিখোঁজদের দুই দিনেও কোন সন্ধান মিলেনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল, নড়িয়া থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্বজনরা নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য পদ্মার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করছেন।
এদিকে ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকাল থেকেই নিখোঁজদের স্বজনসহ হাজার হাজার উৎসুক জনতা নড়িয়ার সাধুর বাজার এলাকায় ভীর জমাচ্ছে। নিখোঁজ স্বজনদের আহাজারিতে পদ্মার পাড়ের বাতাস ভাড়ী হয়ে উঠছে।
অপর দিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম প্রধান মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ স্বজনদের ১০ হাজার করে টাকা অনুদান প্রদান করেছেন।
এ সময় তিনি প্রধান মন্ত্রীর বরাদ দিয়ে বলেন, শরীয়তপুরের জাজিরা-নড়িয়া এলাকার পদ্মার ভাঙ্গন রোধে যা করণীয় তাই করবেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা পদ্মার ভাঙ্গন রোধে গত ২ জানুয়ারী পদ্মার দক্ষিণ তীররক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা একনেকে পাস করেন। এ প্রকল্পের কাজ আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হবে বলে পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্বাস দেন। এ ছাড়াও এনামুল হক শামিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, নড়িয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা ইয়াসমিন, নড়িয়া পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ী, জেলা পরিষদের সদস্য এনায়েত উল্যাহ মুন্সী ও আলমগীর হোসেন, নড়িয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা মোস্তফা, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফেজ সানাউল্যাহ, সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান, সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির মোল্যা, সাধারন সম্পাদক মানিক সরকার, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক জহির সিকদার প্রমূখ।
উল্লেখ্য, নড়িয়ার সাধুর বাজার লঞ্চঘাট এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে হঠাৎ করে কয়েকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা অন্তত ৫০ জন পদ্মা নদীতে পড়ে যায়। এদের মধ্যে তাৎক্ষনিক স্থানীয় লোকজন মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১৭ জনকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নড়িয়া থানার ওসি মোঃ আসলাম উদ্দিন। ঘটনার পর থেকে এলাকার বাড়ী ঘর ও লোকজনকে নিরাপদ স্থানে এবং নদীর তীরবর্তি স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, চাকধ গ্রামের নাসির উদ্দিন হাওলাদার, কেদারপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন বয়াতী, মোক্তারের চর এলাকার মোশারফ চোকদার, আব্দুর রশিদ হাওলাদার, বরিশাল জেলার বাসিন্দা আইটেল মোবাইল কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার আল আমিন, কেদারপুর গ্রামের শাহজাহান বেপারী, মজিবুর রহমান ছৈয়াল, নড়িয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের জামাল ছৈয়াল ও স্থানীয় চা দোকান্দার গুপি দাস।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ বলেন, লঞ্চঘাট এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর থেকেই উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। নদীতে প্রচন্ড সোতের কারনে উদ্ধার অভিযান ব্যহত হচ্ছে। তবে নৌযান নিয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের ২টি ডুবুরীদল নদীর বিভিন্নস্থানে তল্লাশী চালিয়ে যাচ্ছে।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসলাম উদ্দিন বলেন ঘটনার পর থেকেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।