মঙ্গলবার, ৩০শে মে, ২০২৩ ইং, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৯ই জিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী
মঙ্গলবার, ৩০শে মে, ২০২৩ ইং

পদ্মার ভাঙণ রোধে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে আজ

পদ্মার ভাঙণ রোধে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে আজ

পদ্মার ভাঙণ রোধে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করতে গতকাল রোববার একটি ড্রেজার এসে পৌঁচেছে নড়িয়া ভাঙণ কবলিত এলাকায়। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ভাঙণ ঠেকাতে নড়িয়া-জাজিরা ভাঙণ  কবলিত এলাকায় পানি কমলেই বাঁধের কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর)  সকালে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, মূলফৎগঞ্জ, বাঁশতলা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শণ শেষে বেলা পৌনে ১ টার দিকে নড়িয়া উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সচিব এসব কথা জানান তিনি।

সচিব বলেন, স্থায়ীভাবে ভাঙণ রোধের জন্য শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার ৯ কিলোমিটার জুড়ে পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গত ২ জানুয়ারি একনেক সভায় পাস করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা।

২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পদ্মার ভাঙণের তীব্রতা রোধে জুলাই মাসে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ অর্থ ব্যবহার করে ১১ জুলাই থেকে ভাঙণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়ে অব্যাহত আছে। মূলফৎগঞ্জ বাজারের পদ্মার পাড়ে জিও ব্যাগ ফেলে কিছুটা হলেও ভাঙন ঠেকানো গেছে। এই খাতে নতুন করে আরও ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নড়িয়া-জাজিরা উপজেলায় ৯ কিলোমিটার ভাঙণের কবলে পড়েছে। তারমধ্যে চার কিলোমিটার বেশি ভাঙছে। আর এই চার কিলোমিটার ভাঙণ রোধে সাময়িকভাবে কাজ শুরু করা হবে। পদ্মা নদীর প্রচন্ড ভয়াবহ রূপ ভাঙণ রোধে আমরা চেষ্টা করেও পরাস্ত হয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা চলমান আছে। পদ্মার স্রোত নড়িয়া-জাজিরার তীরগুলো ঠেলে দিচ্ছে। তাই মাঝখানের চরগুলোকে কেটে ওই দিক দিয়ে পানি প্রবাহিত করার চেষ্টা চলবে। স্রোতটাকে ঘুড়িয়ে দেওয়া হবে। এভাবে কাঁটতে হবে কাঁটলে যেন ওপার ভাঙণ শুরু না হয়। ভূমি খাত দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। প্লান করেই কাজ শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই কাজে নড়িয়া এলাকায় একটি ড্রেজার এসেছে। আরেকটি ড্রেজার দুই একদিনের মধ্যে ভাঙণ কবলিত এলাকায় পৌঁছে যাবে।

তিনি বলেন, নড়িয়া জাজিরা এই অংশে ৯ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ করা হবে। আর ৯ দশমিক ৯০ কিলোমিটার ভাঙণ রোধে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতুর ডানতীর ও বামতীর বাঁধ রক্ষায় ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ এই শুকনো মৌসুমে শুরু হবে। আইড়াল খা, মধুমতি ও পদ্মা নিয়ে আরও ২ হাজার ৯১ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। প্রতিবছর পদ্মায় ভাঙণে যারা সহায় সম্বলহীন হয়ে যাচ্ছে তাদের কথা চিন্তা করে রিভার সিস্টেম ডেভলপ করে স্থায়ী বাঁধ গড়ে তোলা হবে। ১০০ বছরের পরিকল্পনা এটি। নদ-নদীর জন্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তথা বারো বছরে ২ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে আশিটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। যে প্রকল্পগুলো সরাসরি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে নড়িয়া উপজেলা চত্বরে ভাঙণ কবলিত এলাকার ১ হাজার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১ কেজিচিড়া, ১ কেজি বিস্কুট, ১ লিটার সোয়াবিন তেল, ৫০০ গ্রাম মুড়ি, ১২টি দিয়াশালাইর প্যাকেট ও ১২টি মোম বিতরণ করেন সচিব।

এ সময় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন, নড়িয়া পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম বাবু রার্ড়ী, নড়িয়া উপজেলা পিআইও (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন মতব্বর প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পরেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি বৃহৎ জনপদ। সমাজের হতদরিদ্রদের পাশাপাশি স্বচ্ছল পরিবারগুলো তাদের শত বছরের আবাসস্থল হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কেউ সরকারের পরিত্যাক্ত ভবনে, কেউ ভাড়া করা বাসায়, কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, অন্যের জমি বা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। গত জুন মাসের শেষার্ধে পদ্মার ভাঙ্গণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত পদ্মার আগ্রাসী ছোঁবলে বিলীন হয়েছে ৫টি গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি বসত বাড়ি, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দির, পাকা সড়ক, বিদ্যুৎ লাইন, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ।


error: Content is protected !!