
আগেকার দিনে ডিসি, এসপি, এসডিও, এসডিপিও, সিও, ওসি, দারোগা ইত্যাদি পদবীধারী কর্মকর্তা ছিলেন নিরীহ সাধারণ মানুষের জন্যে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এক-দেড় দশকেও এ আতঙ্ক ছিলো। আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাড় থেকে ঔপনিবেশিকতার ভূত আস্তে আস্তে নেমে যেতে থাকায় তারা ক্রমশ আতঙ্কজনক ভাবমূর্তি পরিহার করতে থাকে। তারা অনিয়ম পুরোপুরি ছাড়তে না পারলেও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে মনোযোগী হয়। এর সুফলও জনগণ পেতে থাকে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়-এ উপলব্ধি থেকেই বস্তুত পরিস্থিতি পাল্টায়। অনেক অবক্ষয়ের মধ্যেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্য থেকে কিছু সুশিক্ষিত সৎ মানুষের জাগৃতি, চেতনা ও দেশপ্রেম জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে জনগণের দূরত্ব কমিয়ে ফেলা শুরু করে। এমনই একজন সরকারি কর্মকর্তা নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এর ব্যাক্তিগত সহকারি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন সানজিদা ইয়াসমিন। এ সপ্তাহে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে রিলিজ নেয়ার কথা রয়েছে তার।
সানজিদা ইয়াসমিন ২০১৭ সালের ১৫ই জানুয়ারী শরীয়তপুরের নড়িয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই সততা, দক্ষতা ও ন্যায় নিষ্ঠার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মগুনে তিনি একজন জনবান্ধব ইউএনও হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।
বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে মানুষকে সচেতন করা, বাল্য বিয়ে বন্ধ করা, ইভটিজিং প্রতিরোধ, মাদকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া, মা ইলিশ রক্ষা গুরুত্বপুর্ন পদক্ষেপ সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
এবছর পদ্মা নদীর ভাঙনে ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে পরে নড়িয়ার মানুষ। সব হাড়ানো নিঃস্ব মানুষগুলোর পাশে যোগ্য অভিভাবকের মত ছিলেন তিনি। দিনের পর দিন রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে পদ্মার পাড়ে গিয়ে অসহায় মানুষগুলোর সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন। সব হাড়ানো এই মানুষ গুলো তাদের বিপদের দিনে পাশে দাড়ানো মানুষটিকে আজীবন মনে রাখবে।
সানজিদা ইয়াসমিন দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলার ঈদ গাঁ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। বাবা মৃত. শামসদ্দিন আহম্মেদ ও মা রওশন জাহানের একমাত্র মেয়ে তিনি। ১৯৮৯ সালে দিনাজপুরের সেন্ট ফিলিপস স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেন। পরে ১৯৯৫ সালে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৯৭ সালে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হয়ে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ইনফরমেশন সাইন অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ২০০১ সালে স্নাতক ও ২০০২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ হওয়ার পরপরই বিয়ে হয়ে যায় তারই পছন্দের পাত্র ডা. মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। পরে স্বামীর অনুপ্রেরণায় ২৮তম ও ২৯তম বিসিএসের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। ২৮তম বিসিএসে সুযোগ না পেয়ে ২৯তম বিসিএস এর প্রস্তুতি নেন। অবশেষে ২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত হওয়ার পর ২০১১ সালে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দেন। এরপর ২০১১ সালের আগস্ট মাসে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন। সবশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেন। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এর ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। পারিবারিক জীবনে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের মা তিনি।
ইউএনও সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি, যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আমার উপর সরকারের অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার। সব সময় নড়িয়া বাসীর বিপদে আপদে চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাড়ানোর। ভুল ত্রুটি সবারই থাকে। আমারও ছিল। ভুলগুলো সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মানুষ তার কর্মের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকে, আমিও আমার কর্ম দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।