
নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা’র মাধ্যমে পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় প্রমোটিং এগরিকালচারাল কমার্শিয়ালাইজেশন এন্ড এন্টারপ্রাইজ (পিএসিই) প্রকল্পের আওতায় “পদ্মা পাড়ে গাভী পালনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধিকরণ ও কর্মস্থান সৃষ্টি” শীর্ষক ভ্যালুচেইন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে।
প্রকল্পের লক্ষ্য হল, বাণিজ্যিকভাবে দেশী জাতের গাভী পালন, দুধ ও বাচ্চার উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বাড়ানো ও জীবন যাত্রার মান উন্নযন করা।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য উদ্যোক্তাদের উন্নত পদ্ধতিতে গাভী পালনের মাধ্যমে দুধের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। উদ্যোক্তাদের উন্নত পদ্ধতিতে গাভী পালন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসইভাবে গাভীর সার্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও মৃত্যুহার কমিয়ে আনা এবং গাভীর প্রথম পাল দেওয়ার বয়স এবং বাচ্চা প্রসবের পর হতে পরবর্তি পাল দেওয়ার সময় পোস্টপারটাম সার্ভিস পিরিয়ড) কমিয়ে আনা।
প্রকল্পের মেয়াদকাল ৩ বছর, (তবে পিকেএসএফ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হ্রাস/বৃদ্ধি করা যেতে পারে)। প্রকল্পের লোকবল প্রকল্পের লোকবল ৮ জন (বেতনভুক্ত)।
নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি নুসা পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর থেকে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ এবং জাজিরা উপজেলায় “পদ্মা পাড়ে গাভী পালনের মাধ্যমে উদ্যোগক্তাদের আয় বৃদ্ধিকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি শীর্ষক ভ্যালুচেইন উন্নয়ন প্রকল্প” বাস্তবায়ন করে আসছে।
৩টি উপজেলায় মোট ৪৫০০ জন খামারীকে দেশী গাভী পালনের জন্য সদস্য হিসাবে বেছে নিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বৎসরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত সদস্যদেরকে আধুনিক পদ্ধতিতে গাভী পালনের জন্য প্রশিক্ষণ এবং সার্বক্ষনিক সর্বাত্বক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করবে। এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত তিনটি উপজেলায় নুসা’র ৬টি শাখায় প্রায় ২৫০০ জন (দুই হাজার পাঁচশত) সদস্যকে যারা দেশী গাভী পালন করে আসছে তাদেরকে “আধুনিক পদ্ধতিতে গাভী পালন ও রোগ ব্যাধি সম্পর্কে পূর্ব সতর্কীকরণ এবং করনীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। (৩০ মে ২০১৮ পর্যন্ত)।
প্রশিক্ষণ প্রপ্তির ফলে খামারীরা গাভীর রোগ ব্যাধি সম্পর্কে পূর্বের তুলনায় বেশী বেশী সচেতনাতা অর্জন করছে এবং সময়পযোগী টিকা/ভ্যাকসিন দেয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রামে অনেক খামারীরাই গুরুত্ব দিয়ে গাভী/গবাদিপশুকে টিকা/ভ্যাকসিন প্রদান করত না, ফলশ্রুতিতে গাভী/গবাদিপশুর মৃত্যুঝুকি থেকেই যেত। এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে কর্মএলাকায় গাভী /গবাদিপশু স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে বেড়ে উঠছে এবং মৃত্যুর ঝুকি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। গবাদি পশুর রোগ ব্যাধি পূর্বসতর্কীকরণের জন্য সদস্যদের এবং সদস্যের বাহিরে যারা গাভী/গবাদিপশু পালন করে আসছে তাদের উদ্ভুদ্ধ করার জন্য কর্ম এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গাভী/ গবাদি পশুর ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬টি শাখায় ১১টি স্পটে ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক ক্যাম্প এর আয়োজন করে প্রায় ১৫০০ গবাদি পশুকে কৃমিনাশক (বোলাস) ট্যাবলেট এবং বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া গাভী পালন, প্রজনন টিকা প্রদান ও স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংরক্ষণ কার্ড তৈরী করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সকল সদস্যদেরকে প্রদান করা হয়েছে যাতে তারা গবাদি পশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক/চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে এবং এই কার্ড অনুসরণ করে সময়মত গবাদি পশুর চিকিৎসা প্রদান করতে পারে।
নুসা এ প্রকল্প থেকে ৩৬ জন উদ্যোক্তার মাধ্যমে গাভী/গবাদিপশুর বাসস্থান ব্যবস্থাপনা মিল্ক রিপ্লেসার ও কাফ স্টার্টার ব্যবহার করে মডেল খামার স্থাপন করা হয়েছে। পূর্বে অধিকাংশ খামারীরা গাভীর বাসস্থান ব্যবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ছিলনা। বাসস্থানের অস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারনে মৃত্যুর হার বেশি হত। মডেল খামারের ধারণা এবং প্রকল্প থেকে ব্যায় নির্বাহ করে মডেল খামার তৈরী করে দেওয়ার ফলে অল্প খরচে গবাদি পশুর স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মানের ধারণা সকল সদস্য এবং আশপাশের গবাদি পশু পালন কারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত খামার তৈরীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিমধ্যে স্ব-উদ্যোগে অনেকেই স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান তৈরি করেছে যা প্রকল্পের কার্যক্রমের প্রভাব হিসেবে প্রতিয়মান হয়। এই প্রকল্পের কার্যক্রমের অগ্রগতি স্বরূপ কর্ম এলাকায় দেশী গাভী পালনের হার দিন দিন বেড়েই চলছে সে কারণে স্থানীয় কাঁচা ঘাসের চাহিদা বাড়ছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচা ঘাস না থাকায় এলাকায় কাঁচা ঘাসের প্রা”ুর্যতা বৃদ্ধি এবং গবাদি পশুর পষ্টি চাহিদা পুরনের লক্ষ্যে খামারীদের মধ্যে উন্নত জাতের কাঁচা ঘাস চাষ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেক সদস্যকে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাসের কাটিং দেয়া হয়েছে যাতে করে গবাদি পশুকে নিপিয়ার ঘাস খাওয়াতে পারে এবং আসপাশের অন্যান্য খামারীরা এই জাতীয় উন্নত জাতের ঘাস চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। এ পর্যন্ত ১২ জন সদস্যর মধ্যে ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত ঘাসের কাটিং সদস্যরা বাড়ির আসপাশে রোপন করেছে। রোপনকৃত ঘাসের কাটিং ব্যাপক ভাবে উৎপাদন হওয়ায় উৎপাদিত ঘাস কাটিং করে আরো বেশি যায়গায় রোপন করে গাভীর কাঁচা ঘাসের চাহিদা মিটাতে পারছে। এই প্রকৃয়াটি অনুসরন করে কর্মএলাকায় অন্যান্য খামারীরা ঘাসের চাষ শুরু করেছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই এলাকার গবাদিপশুর চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা ঘাস উৎপাদন করা সম্ভাব হবে।
পূর্বে এলাকায় বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে দুধ কম হয় একারণে দেশী গাভী পালনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু নুসা’র “পদ্মা পাড়ে গাভী পালন প্রকল্পের কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে দেশী গাভী পালনের সুবিধাদি যেনে বিশেষ করে অল্প খরচে এবং ঝুকি কম থাকায়, তুলনামুলক লাভ বেশি বিধায় দেশি গাভি পালনের হার পূর্বের তুলনায় কয়েকগুন বেড়েছে ফলে কর্ম এলাকায় পূর্বের চেয়ে দুধের উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে এবং জনসাধারণ অল্প খরচে দুধের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে যে, ২/৩ বছর পূর্বের তুলনায় বর্তমানে সকল ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমাদের কর্ম এলাকায় দুধের দাম বেশি একটা বাড়ে নাই এবং কম মুল্যে থাকায় সকল শ্রেণীর মানুষ দুধ ক্রয় করতে পারছে।
এভাবে ভ্যালুচেইন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশী গাভী পালনের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে দেশী গাভী পালন যেমন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে একেই সময়ে গ্রামীণ জনপথে পুরুষ মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং এলাকার দুধের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে অথবা প্রক্রিয়া জাত প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারবে।
নুসার ভ্যালুচেইন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় এবং নুসার নির্বাহী পরিচালক মিজ মাজেদা শওকত আলী সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা এবং দেখভাল করছেন।
প্রকল্প এলাকা এবং প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্যভুক্ত উদ্যোক্তার সংখ্যা লক্ষ্যভুক্ত উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের এবং ভ্যাকসিনেশনের ক্যাম্পসহ