বুধবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৩ ইং, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
বুধবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৩ ইং

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার বেলায়েত হোসেন ইমরোজ, বাবার সাথে কৃষিকাজ ও চা বিক্রি করতো

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার বেলায়েত হোসেন ইমরোজ, বাবার সাথে কৃষিকাজ ও চা বিক্রি করতো

এক অদম্য আত্মপ্রত্যয়ী প্রতিভার নাম বেলায়েত হোসেন ইমরোজ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা অবস্থায় দরিদ্রতার কারণে যে একসময় বাবার সাথে কৃষিকাজ ও চা বিক্রি করতো, সেই বেলায়েত ৪১ তম বিসিএস-এ আজ শিক্ষা ক্যাডার।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের অজোপাড়াগাঁ বাছারকান্দী গ্রামের কৃষক পরিবারের শামসুল তালুকদার ও হালিমা বেগম দম্পত্তির ৪ সন্তানের মধ্যে বেলায়েত (২য়) একমাত্র পুত্র সন্তান। ৩১ নং পশ্চিম বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মেধা বৃত্তিসহ প্রাথমিক সমাপনী পাস করে। এর পর আর্থিক সংকটে বাবা পড়ালেখার খরচ চালাতে না চাইলে সে বাবার সাথে কৃষিকাজ ও চা বিক্রি করে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতিেেত পড়ালেখার আগ্রহ পোষণ করে। কিন্তু শহরে ভালো স্কুলে পড়ার সামর্থ্য না থাকায় স্থানীয় বিনোদপুর মৌলভীকান্দী দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয় এবং সেখান থেকে জিপিএ-৫ সহ ২০১২ সালে দাখিল পাস করে। অবশ্য প্রাথমিকে প্রাপ্ত বৃত্তির টাকা নাহলে তার লেখাপড়া চালানো সম্ভব হতোনা। এরপর শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে মানবিক বিভাগে টেস্ট পরীক্ষায় প্রথম এবং পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ সহ এইচএসসি পাস করে। এ সময়েও তাকে টিউশনি করে পড়ার খরচ মেটাতে হতো। এর পর স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখানেও টিউশনি করে পড়াশুনা চালিয়ে যায় মেধাবী ও অধ্যবসয়ী বেলায়ে। অত্যান্ত বিনয়ী ও লাজুক স্বভাবের বেলায়েত ছোটবেলা থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো এবং শিক্ষক ও মুরব্বীদের শ্রদ্ধা করতো। খুব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হওয়ায় কারো কাছে সাহায্যের হাত পাতেনি। তবে প্রবল আত্ম বিশ্বাসী, আত্ম প্রত্যয়ী ও সংগ্রামী হওয়ায় দারিদ্রের কাছে হার মানতে হয়নি তাকে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দরিদ্রতার দেয়াল ভেঙ্গে জীবন সংগ্রামে বিজীত এক মানুষ বেলায়েত।

সব সময় বলতো আমি একটা কিছু করে দেখাবো। আসোলেই সেই চা বিক্রেতা ছেলেটি ৪১ তম বিসিএস এ শিক্ষা ক্যাডারে মেধাক্রমে ২য় হয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মানুষ আল্লাহর রহমত নিয়ে একাগ্রচিত্তে চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। সে এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রথম হয়েছিল। সে অত্র এলাকার একটি দৃষ্টান্ত, একটি জ্ঞানের মশাল। সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এলাকার শিক্ষার্থীদের উচিৎ তাকে অনুসরণ করা ও তার সান্নিধ্যে এসে তার জ্ঞানের মশাল থাকে আলো নিয়ে সমাজটাকে আলোকিত করা। কথাগুলো জানিয়েছেন চন্দ্রপুর আবদুল হাকিম পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী রহমান মিজান। যিনি উক্ত মাদ্রাসায় বেলায়েতের দাখিল ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তখন কর্মরত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বেলায়েতকে নিয়ে আমি সব সময়ই গর্ব করি এবং তার আরো সাফল্য কামোনা করি।
#

 

 


error: Content is protected !!