
রাজধানীর সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবির ঘটনায় দুই পরিবারের নিহত ছয়জনের লাশ তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার দক্ষিণ তারাবুনিয়ায় ইউনিয়নের কিরণ নগরে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
রোববার (১০ মার্চ) রাতে সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া শাহিদা বেগমের মরদেহ বাড়ির পাশে একই ঘটনায় নিহত তার দুই মেয়ে মিম ও মাহির কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। এর আগে দুপুরের দিকে মিম ও মাহির লাশ দাফন করা হয়। এছাড়া একই ঘটনায় নিহত দেলোয়ার ও তার ছেলে জুনায়েদকে দুপুরে কিরণনগর হাজী নুর মোল্যা কান্দি গ্রামের একটি কবরস্থানে স্ত্রী জামশেদার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। জামশেদাকে দাফন করা হয়েছে গত শনিবার (৯ মার্চ) বিকালে।
নিখোঁজের ঘটনায় সর্বশেষ শাহিদা বেগমের মরদেহ রোববার (১০ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চরকালিগঞ্জ তেলঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার হয়।
গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাতে সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন দুই পরিবারের ছয়জন। তারা হলেন,শাজহালালের স্ত্রী শাহিদা বেগম (৩২), তার দুই মেয়ে মিম (৮) ও মাহি (৫) এবং চাচাতো বোন জামশেদা বেগম (২৫), জামশেদার স্বামী দেলোয়ার প্রধানিয়া (৩০) তাদের ছেলে জুনায়েদ (৮ মাস)। ঘটনার পরপরই শাহজালালকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লঞ্চের পাখায় তার দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পরদিন শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে জামসেদার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার (৯মার্চ) উদ্ধার হয় জামসেদার স্বামী দেলোয়ার হোসেন (২৮), তাঁদের আট মাস বয়সী ছেলে জুনায়েদ, জামসেদার চাচাতো ভাই শাহজালালের দুই সন্তান মিম (৮) ও মাহির (৬) লাশ। সর্বশেষ রোববার (১০ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে উদ্ধার করা হয় শাহজালালের স্ত্রী শাহিদা বেগমের মরদেহ।
শাহজালাল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের জাফর মালের কান্দি গ্রামের মহসিন চোকদারের ছেলে। এবং জামশিদা শাহজালালের চাচা কামাল চোকদারের মেয়ে। একই বাড়ি তাদের। জামশেদার স্বামী দেলায়ার প্রধানিয়া পাশ^বর্তী সাইফুল মাষ্টার কান্দি গ্রামের গণি প্রধানিয়ার ছেলে। শাহজালাল ও দেলোয়ার পরিবার নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে থাকতেন এবং দরজির দোকানে কাজ করতেন। দেলোয়ার ও জামশিদার জাকিয়া নামে আট বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। জাকিয়া গ্রামের বাড়িতে দাদা দাদির সাথে থেকে স্থানীয় একটি প্রাইমারী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীড়ে পড়ে। বাবা-মা ও ভাইকে একসাথে হারিয়ে এতিম হয়ে গেলো জাকিয়া। দাদা দাদি ছাড়া তার দেখার আর কেউ নেই।
জামসেদার বোন খাদিজার বিয়ের দিন ধার্য ছিল গত শুক্রবার (৮ মার্চ)। ওই বিয়েতে যোগ দিতে স্বামী-সন্ত্রান ও চাচাতো ভাই শাহজালাল, তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন জামসেদা। সদর ঘাট থেকে লঞ্চে ওঠার জন্য একটি নৌকায় নদী পাড় হওয়ার সময় একটি লঞ্চের ধাক্কায় নিখোঁজ হন ওই ছয়জন।
এ দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। বিয়ে স্থগিত রাখা হয় জামশিদার বোন খাদিজার। রোববার (১০ মার্চ) জামশিদার বাপের বাড়ি কিরণ নগরে গিয়ে দেখা যায় জামশিদার মা ইয়ারননেছা, বোন খাদিজা ও সোহাগী একই ঘাটের উপর বসে আহাজারী করছে। ঘটনার পর থকে তারা স্বজনদের শোকে পাগল প্রায়। শাহজালের বাবা মহসনি চোকদার ছেলে ও ছেলের বউ ও দুই নাতনীকে বাড়িয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশিরা জানালের পুত্রে নাতনীদের শোকে মহসিন চোকদার বেদিশা হয়ে গেছে। তার কথাবার্তা ঠিক নাই। কখন কি বলে নিজেও বলতে পারেনা। পাশ^বর্তী সাইফুল মাষ্টার কান্দি গ্রামের দেলোয়ারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দেলোয়ার ও জামশিদার বেচেঁ থাকা একমাত্র মেয়ে জাকিয়া দাদি মাজেদা বেগমের পাশে মনমরা হয়ে বসে আছে। পুত্র, পত্রবধূ ও নাতির শোকে মাজেদা বেগম বিলাপ করছে-জাকিয়া এতিম হয়ে গেছে। এখন কে দেখবে জাকিয়াকে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া শাহিদা বেগমের মরদেহ আজ রাতে দুই মেয়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহত ছয় জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত সকলকে দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা শরীয়তপুর জেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথা সম্ভব সহযোগিতার চেষ্টা করে যাবো। জামশিদা ও দেলোয়ারের বেচেঁ থাকা একমাত্র মেয়ে জাকিয়ার থাকার জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেব।