তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরাত জাহান ইতি (২২) ও তার বড় বোন ডালিয়া আক্তার (২৮) নামের দুই বোনকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আজ বুধবার উন্নত চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
(আজ) ২৪ মার্চ বুধবার দুপুরে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা হয়েছে। এরআগে গত ১৭ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বিকেনগর পূর্ব কাজী কান্দি গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী ইতি।
আদালতের মামলা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেনগর পূর্ব কাজী কান্দি গ্রামের নূর ইসলাম মাদবরগংয়ের সঙ্গে একই বংশের ইসরাত জাহান ইতির পরিবারের দীর্ঘদিন যাবত জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ মার্চ বিকেলে ইতিগংদের জমি দখল করে স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কাটবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল নূর ইসলামগংরা। এ ঘটনা শুনে ইতি, তার চৌদ্দ মাসের ছেলে সায়ান আহম্মেদ ও তার বড় বোন ডালিয়া ঘটনাস্থলে যায়। পরে দুই পক্ষ এক যায়গায় বসে। তখন ইতিদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে নূর ইসলামগংরা। প্রতিবাদ করলে নূর ইসলাম মাদবরের (৫৫) নের্তৃত্বে নূরুল আমিন বয়াতী, ইউসুফ আলী মিসু (২৭), ইদ্রিস মাদবর (৫০), কামরুন্নাহার বেগম (৫০) মিলে ইতিকে রড দিয়ে পিটিয়ে বাম হাত ভেঙে দেয়। ইতিকে তার বোন ডালিয়া উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসলে তাকেও কিল, ঘুসি মারে এবং ইট ও রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত করে নিলাফুলা জখম করে। ছোট সায়ান আহম্মেদকে কোল থেকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয় আসামীরা ইতি ও ডালিয়াকে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর বসে গোপনাঙ্গে স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। পরে স্থানীয়রা দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ইসরাত জাহান ইতি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের সম্পত্তি দখল করার পাঁয়তারা করছেন নূর ইসলাম, নূরুল আমিন, ইউসুফ, ইদ্রিস, কামরুন্নাহাররা। প্রতিবাদ করলে আমাকে, বড় বোন ডালিয়া ও ছেলে সায়ানকে মারধর করে ওরা। আমার ও বোনের পড়নের কাপড় খুলে নির্যাতন করেছে তারা। নির্যাতেন ফলে আমার সিজারে যায়গা দিয়ে ও প্রস্রাবের অঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হয়।
তিনি বলেন, নূর ইসলামগংরা আমাদের স্বর্ণের চেইন, হীরার আংটিসহ অন্যান্য গহনা, যার আনুমানিক মূল ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ বাড়ির মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জাজিরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মিমাংসা করার কথা বলে। মিমাংসা হব না বলে পাঁচদিন পর গত ২২ মার্চ পুলিশ আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করায়। অভিযোগে প্রধান আসমী নূর ইসলাম মাদবরকে বাদ দিয়ে দেয়। তাই সঠিক বিচার পেতে আদালতে মামলা করেছি।
এদিকে, অভিযুক্ত নূর ইসলাম মাদবর এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি নয়। তিনি বলেন, নো, নেবার আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দিব না। আমার বক্তব্য নিতে হলে থানা থেকে পার্মিশন নিয়ে আসেন।
ইতির স্বজনরা জানান, তাদের কোমরে, রানে, হাতে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক আঘাতের দাগ রয়েছে।
বিকেনগর পূর্ব কাজী কান্দি গ্রামের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন, আল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, আমরাও ছিলাম ঘটনাস্থলে। ইতি ও ডালিয়াকে বেধড়ক মারপিট করেছে নূর ইসলামগংরা। পরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করেন।
বিকেনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, সামান্য বিষয় নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে আমি শুনেছি। শুনে সালিশে বসে বিষয়টি দেখার জন্য উভয় পক্ষকে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আইনের মাধ্যমে লড়বে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, দুই নারীকে বেধড়ক মারধর করেছে প্রতিপক্ষ। কারণ ওদের অভিভাবক নেই। ঘটনা শুনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আসামীদের গ্রেফতারের চেস্টা অব্যাহত আছে।