শরীয়তপুরের সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী শাহজাহান মৃধার বিরুদ্ধে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে গত ৩১ শে জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে (দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২২ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮/১১) একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। যার তদন্ত দাখিলের উদ্দেশ্যে গত ২৭ শে আগষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা ফরিদপুর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। উক্ত অফিস শরীয়তপুর জেলা রেজিস্ট্রার প্রধান সহকারী শাহজাহান মৃধার বিরুদ্ধে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জনের অভিযোগটি তদন্ত করার লক্ষ্যে শাহজাহান মৃধাকে গত ২৮ শে আগষ্ট নোটিশ করে এবং ৯-ই সেপ্টেম্বর অভিযোগের জবাব দিতে বলেন।
দুদক ফরিদপুরের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা এ বিষয়ে মুঠোফোনে বলেন, আমাদের কাছে শাহজাহান মৃধার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। গত ৯-ই সেপ্টেম্বর প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র/কাগজপত্রের বিবরণ দিয়ে তাহার নিকট জবাব চেয়েছিলাম। আংশিক কাগজপত্র উক্ত তারিখে পেয়েছি। পুরো রেকর্ড/কাগজপত্র পেলে তদন্তে মাঠে যাব।
জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী তারেক মুন্সীকে শাহজাহান মৃধার বিরুদ্ধে দুদকের কোনো চিঠি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা শাহজাহান তার বিরুদ্ধে দুদক থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তা আমরা শাজাহান মৃধার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। শাহজাহান মৃধার চাকুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে তার চাকুরী সরকারিকরণ এবং ২০১৯ সালের ৯-ই জুন তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
শাহজাহান মৃধাকে এ অভিযোগের ব্যাপারে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে আমার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ একটি ষড়যন্ত্র। কেউ আমাকে হয়রানী করার উদ্দেশ্য এ অভিযোগ করেছে।
ভেদেরগঞ্জ রেজিস্ট্রার অফিসের নকল নবিশ জানে আলম মুন্সি একটি আবেদনে বলেন, শাহজাহান মৃধা একজন দুষ্টু প্রকৃতির, সুচতুর ও চরিত্রহীন লোক। স্কুল জীবনে হতদরিদ্র অবস্থায় দিন কাটাত। বাদাম ও ঝাল মুড়ি বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ যোগাতো। এক সময় সে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের অধীনে অস্থায়ীভাবে নকল নবিশ এর কাজ করতো। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে তার চাকুরী স্থায়ীকরণ হয়। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার দুর্নীতি। খুব কম সময়ে অর্থাৎ ২০০১ সালে পালং বাজারে ৫০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি ক্রয় করে। দুর্নীতির সব পথ তার জানা ছিল। নিয়োগ, বদলি পদোন্নতি কাজীদের লাইসেন্স প্রদানে হাতিয়ে নিত লক্ষ লক্ষ টাকা। শরীয়তপুর জেলার ৬টি সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের উৎকোচ ধার্য করা ছিল তার জন্য। জেলা রেজিস্ট্রি অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা তার দাপটে কোণঠাসা হয়ে থাকতো। চাকরি শেষ হওয়ার কিছুদিন পূর্বে নকল নবিশ নিয়োগে জনপ্রতি তিন লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নেয় এই দুর্নীতিবাজ। সেই মতে ৫০ জন নকল নবিশ নিয়োগে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একই স্মারক বলে দুইজন লোককে নকল নবিশ পদে নিয়োগ দান করেন। স্মারক নং-আইজিআর ১২১৫৫, তারিখ ২৩/০৯/২০১৮। যাহা শরীয়তপুর অফিসে ২৮/০৯/২০১৮ তারিখে শরীয়ত ৩৯৪ নং স্মারকে এবং ২৬/০৯/২০১৮ তারিখে শরীয়ত ৪০০ নং স্মারকে জমা করা হয়। নকল নবিশ সেলিম ৪১৩ নং স্মারকে ২৫/০৯/২০১৮ ইং সনে নিয়োগ পান এবং নকল নবিশ পারভেজ ৪১৮ নং স্মারকে ২৭/০৯/২০১৮ সনে নিয়োগ পান। উভয় ব্যক্তির স্মারক নং আইজিইআর-১২১৫৫, তাং- ২৩/০৯/২০১৮। একই স্মারকে দুইজন ব্যক্তি নিয়োগ দানের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম।