
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর, ইসলামপুর ও শিধলকুড়া ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ের চলমান কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজে খাতা-কলমে শ্রমিক সংখ্যা ঠিক রেখে বাস্তবে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে লোক দেখানো কাজ করানো হচ্ছে। এখনো কাজ শুরু হয়নি অনেক প্রকল্পের। তালিকায় অধিকাংশ শ্রমিকের নাম ভুয়া। এসব ভুয়া শ্রমিকের নামে টাকা উত্তোলনের পর ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে।
ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নে ১৮০ জন ও ইসলামপুর ইউনিয়নে ১১৪ ও শিধলকুড়া ১৫৩ অতি দরিদ্র শ্রমিক এ প্রকল্পের অধীনে ৪০ দিন কাজ করার কথা রয়েছে। এ কাজে একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ টাকা করে ৪০ দিনের কাজে আট হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ের এ কাজ শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার কাজ বন্ধ থাকবে এবং সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিন কাজ চলার কথা রয়েছে।
অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের কাজে ডামুড্যা উপজেলার ওই তিনটি ইউনিয়নেই ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রকৃত গরিব মানুষ এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না এবং জনগণ তাদের প্রাপ্ত পাওনা থেকে রীতিমতো বঞ্চিত হচ্ছেন।
কনেশ্বর ইউনিয়নে ৬টি অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এ ইউনিয়নে ৬ নং ওয়ার্ডের আনোয়ার ডাক্তারের বাড়ি থেকে ফারুক মাদবরের বাড়ি পর্যন্ত ৩০ জন শ্রমিক ধরা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর কাজ ধরার কথা থাকলেও এখনো কাজ শুরু করেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মামুন। ৫নং ওয়ার্ড ছাতিয়ানি নুরু সরদারের বাড়ি থেকে জামালের বাড়ি পর্যন্ত ২৫ জন শ্রমিক ধরা রয়েছে। এ প্রকল্পে ৪ জন শ্রমিক দিয়ে ১০ দিন কাজ করিয়ে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও কেহুর ভাংগা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪০ জন শ্রমিকের স্থানে কাজ করছে ১০ জনে। একই অবস্থা ১ ও ৯ নং ওয়ার্ডের। ইসলামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে কাজ বন্ধ রয়েছে। শিধলকুরা ইউনিয়নের ৪ টি কাজেই ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে কাজ। আর এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগ আনা হয়েছে অন্য এলাকা থেকে। ৫ নং ওয়ার্ড ছাতিয়ানি নুরু সরদারের বাড়ি থেকে জামালের বাড়ি পর্যন্ত ২৫ জন শ্রমিক ধরা রয়েছে। এ প্রকল্পে ৪ জন শ্রমিক দিয়ে ১০ দিন কাজ করিয়ে এখন কাজ বন্ধ জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি সাজ্জাদ আলী সাজু বলেন, আমার প্রকল্পে প্রতিদিন কাজ করছেন ১০ জন। খালে পানি চলে আসায় শনিবার কাজ করতে না বলেছি। আরো কয়দিন কাজ বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে সবকিছু চেয়ারম্যান দেখবে সে আমাদের শ্রমিক দেয়।
লেবার সরদার সালাম বেপারী জানান আমার বাড়ি কনেশ্বর ২নং ওয়ার্ডে। এখন আমি ১ নং ওয়ার্ডে কাজ করাইতেছি। আমি কনেশ্বর ইউনিয়নের ৪ সাইডে শ্রমিক দেই।
কনেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বাচ্চু বলেন, পানি থাকায় কাজ ধরতে পারছে না অনেক জায়গায়। পানি কমলে কাজ ধরা হবে।
ডামুড্যা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তাহামিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার এ প্রকল্প দিয়েছে। কোনো প্রকল্প যদি শ্রমিক কম নিয়ে কাজে অনিয়ম করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্তুজা আল মুঈদ বলেন, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে অনিয়ম হলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।