Tuesday 24th June 2025
Tuesday 24th June 2025

মৎস্য খাতে সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনে শরীয়তপুরে গোলটেবিল বৈঠক

মৎস্য খাতে সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনে শরীয়তপুরে গোলটেবিল বৈঠক
মৎস্য খাতে সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনে শরীয়তপুরে গোলটেবিল বৈঠক

মাছ শুধু খাবার নয়, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণে পিছিয়ে আছে অনেক সম্ভাবনাময় অঞ্চল, যার মধ্যে শরীয়তপুর অন্যতম। এখানকার মাছচাষিদের উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে বাজারজাতের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না—এমন বাস্তবতা সামনে রেখে এবার প্রক্রিয়াজাত মৎস্য পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে আয়োজন করা হলো এক গোলটেবিল বৈঠক।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল ১০টায় শরীয়তপুর সদর উপজেলার চৌরাস্তাস্থ উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস-এর সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় এবং এসডিএস-এর বাস্তবায়নে আয়োজিত এ বৈঠকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষি, গবেষক, কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মীরা অংশ নেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এসডিএস-এর মাইক্রো ফাইন্যান্স পরিচালক বিএম কামরুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন এসডিএস প্রজেক্ট ম্যানেজার জাকির হোসেন। পুরো আলোচনায় উঠে আসে স্থানীয় পর্যায়ে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যের চাহিদা, উদ্যোগ ও বাধা-বিপত্তির চিত্র।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, “শুধু মাছ উৎপাদন নয়, মাছের মূল্য সংযোজন করে প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে পারি, তাহলে শরীয়তপুরও এই শিল্পে নেতৃত্ব দিতে পারবে।”

বিশেষ অতিথি ফিসারিজ এক্সিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, “আমরা মাছ উৎপাদন করি, কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরি হলে অন্তত ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত লাভ পাওয়া সম্ভব।”
সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, “মাঠপর্যায়ে নারীরা মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে জড়িত হলেও তারা প্রশিক্ষণ ও বাজারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য এই খাত খুবই কার্যকর হতে পারে।”

ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, “আমরা চাই, স্থানীয় পর্যায়ে হিমায়িতকরণ ও প্যাকেজিং সুবিধা গড়ে উঠুক। এসব ছাড়াই উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না।”
সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন বলেন, “মৎস্য খাতকে সামাজিক উদ্যোগে রূপ দিতে হবে। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি এনজিও ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব দরকার।”

এসডিএস-এর কৃষি সমন্বয়কারী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, উদ্যোক্তারা নিজেরা চেষ্টা করলেও কারিগরি সহায়তা ও মার্কেট লিংকেজের অভাবে পিছিয়ে পড়ে। এই বৈঠক সে সমস্যা সমাধানের অংশ হতে পারে।
বৈঠকে উদ্যোক্তারা তাদের মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তারা বলেন, মাছ ধরা ও চাষে পারদর্শী হলেও আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ, ব্র্যান্ডিং, ও রপ্তানির নিয়ম-কানুন জানেন না অনেকেই। তাই নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ, প্রযুক্তি সহায়তা এবং বাজার সংযোগ নিশ্চিত করার দাবিও উঠে আসে।

বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়:ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তালিকা তৈরি করে বিশেষ প্রশিক্ষণের আওতায় আনা,উপজেলা পর্যায়ে হিমায়িতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন,স্থানীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও প্রদর্শনীর আয়োজন,নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা সহায়তা প্যাকেজ,স্কুল-কলেজে মাছভিত্তিক পুষ্টিকর খাদ্য ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি বৈঠকে আলোচনার সারাংশে উঠে আসে, শুধু মাছ উৎপাদন নয়, মাছকে পণ্য হিসেবে তৈরি করে তার গুণগত মান বজায় রেখে বাজারজাত করাই এখন চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের সমস্যা ও সম্ভাবনার সমন্বয়ে যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া যায়, তাহলে শরীয়তপুর প্রক্রিয়াজাত মৎস্য খাতে জাতীয়ভাবেও দৃষ্টান্ত হতে পারে।