
পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের শেষ দিনের অনুষ্ঠান ২২ অক্টোবর সকালে কক্সবাজারের হোটেল সি প্যালেসে পপুলার লাইফের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বীমা কর্মীর বর্ণাঢ্য এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গ্রাহকদের বীমা দাবীর চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩৯ লাখ গ্রাহককে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।
পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি.ই.ও, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য বিএম ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্যাহ হারুন পাশা, আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ। স্বাগত বক্তর্য রাখেন পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম শওকত আলী ও সঞ্চালনার দায়িত্তে ছিলেন মোঃ এনামূল হক এনাম মোল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৃন্দ।
দেশের জনসংখ্যার তুলনায় বর্তমানে বীমা গ্রাহকের সংখ্যা খুবই কম। উল্লেখ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হতে এটাকে বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বীমা খাতে সেটা আমরা করতে পারি নাই। এতো বীমা কর্মী থাকার পরও জিডিপিতে আমাদের অবদান নাই বললেই চলে। এটা আমাদের ব্যর্থতা।
মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, আমাদের এই অবস্থার পিছনে কারণ- বীমার প্রতি মানুষের আস্থা নেই। বীমার প্রিমিয়াম নেয়ার ক্ষেত্রে যতটা উৎসাহিত করি, পলিসি করার পর সেটা আর করি না।
তিনি বলেন, গ্রাহকসেবা না দিয়ে প্রতারনা করলে এ সেক্টর দাঁড়াবে না। গ্রাহককে দেয়া প্রতিশ্রুতি আমাদের রক্ষা করতে হবে। যারা ভালো কাজ করবে তাদের প্রশংসা করব। আর যারা ভালো কাজ করবে না তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবো।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আগামী বছর থেকে বীমা কোম্পানিগুলোর র্যাংকিং তৈরি করব। কোন বীমা কোম্পানি কি রকম তা র্যাংকিং এর মাধ্যমে বোঝা যাবে। শুধু প্রিমিয়াম আদায়ের ওপর এই র্যাংকিং করা হবে না, সব বিষয় দেখে করা হবে। মূল যে বিষয়গুলো দেখা হবে, তার মধ্যে অন্যতম- মানুষের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কিনা সেটা।
বীমা কর্মীদের উদ্দেশ্যে জয়নুল বারী বলেন, মাঠকর্মীরাই নতুন পলিসি করেন, নতুন গ্রাহক তৈরি করেন। এই মাঠকর্মীরাই বীমা কোম্পানির প্রাণ। মাঠকর্মীরা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। আপনাদের জমা করা টাকাই বিনিয়োগ করা হয়। সেই বিনিয়োগ থেকে হয় কর্মসংস্থান।
পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বীমা দাবি পরিশোধের হার ভালো বলেও মন্তব্য করেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
এসময় বিশেষ অতিথি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেছেন, আমরা মনে করি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বীমা খাতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আগামীতেও কোম্পানিটি আরো ভালো করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আবদুল্লাহ হারুন পাশা আরো বলেন, বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করে। কিন্তু আমরা সেভাবে বীমা খাতকে উন্নত করতে পারি নাই। জিডিপিতে অবদান বাড়াতে পারিনি। তিনি বলেন, বীমার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে মাঠ কর্মীদের কাজ করতে হবে। একইসাথে নতুন নতুন যুগোপযোগী পরিকল্প তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বীমা শিক্ষার প্রসারে সরকার কাজ করছে। এরইমধ্যে দুই জনকে একচ্যুয়ারি বিষয়ে পড়ালেখার জন্য সরকারি খরচে লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। সরকার আগামীতেও এটি চালু রাখতে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী বলেছেন, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩৯ লাখ গ্রাহককে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে। এই বীমা দাবি পরিশোধের মাধ্যমে ৩৯ লাখ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে পপুলার লাইফ। এটাই মানবসেবা।
বিএম ইউসুফ আলী বলেন, দেশে সবচেয়ে মর্যাদাবান পেশা বীমা। বঙ্গবন্ধু যে পেশা বেছে নিয়েছিলেন, আমরা সে পেশায় আছি। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা এখানে সম্মেলন করতে পারতাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে বীমা পরিবারের সদস্য মনে করেন। এটা আমাদের গর্ব।
তিনি বলেন, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এ বছর ৭ হাজার কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী বছর ২৫ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে। তিনি বলেন, আগামী ৫ বছর বীমা খাতে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নাম এগিয়ে থাকবে।
বিএম ইউসুফ আলী আরো বলেন, আমরা শুধু বীমার ব্যবসাই করি না। আমরা সমাজসেবামূলক কাজও করে যাচ্ছি। মাদক বিরোধী আন্দোলন, খেলাধুলা সহ বন্যাদুর্গতদের পাশেও দাঁড়িয়েছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করে বিএম ইউসুফ আলী বলেন, আইডিআরএ’র সার্কুলার বেশ কিছু কোম্পানি মানছে না। কমিশন ও সাংগঠনিক কাঠামোর সার্কুলারও মানছে না এসব কোম্পানি। এটা বীমা খাতের শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ হারুন-অর-রশিদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বীমা খাতে নারী কর্মী বাড়াতে হবে। ল্যাপস রেশিও কমিয়ে আনতে হবে। একই সাথে সময়োপযোগী নতুন নতুন বীমা পরিকল্প তৈরি করতে হবে।
সামনে ব্যাংকাস্যুরেন্স আসছে। এই ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে বীমা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন। দেশের বীমা খাতে ব্যবসা পরিচালনাকারী সকল বীমা কোম্পানির এজেন্ট লাইসেন্স হালনাগাদ করারও আহবান জানান তিনি।
#