
এন. এস. আই/বাংলাদেশ ব্যাংক/কলেজ নিবন্ধন/সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি যে কোন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত জানুয়ারি-২০২০ এ শরীয়তপুর সদর উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার মো: এমদাদুল হক-এর নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা নেয় শরীয়তপুর জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন(ইফা)’র মাষ্টার ট্রেইনার মোস্তাকিম বিল্লাহ। সেই পাওয়ানা টাকা না দেয়ার পায়তারায় এমদাদুল হক-এর বিরুদ্ধে মোস্তাকিম বিল্লাহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমনই অভিযোগ পেশ করলেন কেয়ারটেকার মো: এমদাদুল হক। এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়।
এমদাদুল হক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন, শরীয়তপুর জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন(ইফা)’র মাষ্টার ট্রেইনার মোস্তাকিম বিল্লাহ আমাকে বলেছে বিভিন্ন বড় বড় রাজনীতিবিদ আমার আত্মীয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ বিভিন্ন সেক্টরে আমার চাকরি দেয়ার ক্ষমতা আছে। তাই সে আমার নিকট থেকে ৩ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু ০১(এক) বছর পেরিয়ে গেলেও মাষ্টার ট্রেইনার মোস্তাকিম বিল্লাহ আমাকে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দিতে পারে নাই। তাই তার নিকট থেকে আমার পাওয়ানা ৩ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে তিনি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। গত মে-২০২০ইং এ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রণোদনা হিসেবে মাদ্রাসার ইয়াতিম ও দুস্থ শিক্ষার্থীদের বিতরণের জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ঐ প্রণোদনার টাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তালিকাভূক্তির মাধ্যমে মোস্তাকিম বিল্লাহ সদর উপজেলাধীন দক্ষিণ বালুচড়া রিয়াজুল জান্নাহ নাসির উদ্দিন কওমী মাদ্রাসাকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পাইয়ে দেয়। কারন, মোস্তাকিম বিল্লাহ উক্ত মাদ্রাসার উপদেষ্টা ও মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী আলমগীর হোসেন সরদারের ভাগ্নে। আমি ঐ মাদ্রাসায় দায়িত্বশীল মুহতামিম হিসেবে কর্মরত ছিলাম। করোনাকালীন সময়ে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় এবং মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্ট না থাকায় প্রণোদনার টাকা মুহতামিম হিসেবে মোস্তাকিম বিল্লাহ’র নির্দেশনায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যয় করার জন্য আমার নিকট জমা রাখা হয়। আমি শুধু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বাবদ প্রায় ২ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করি। আর বাকি ৭ হাজার ৩০০ টাকা আমার নিকট জমা রাখি। উক্ত ইয়াতিম ও দুস্থদের জমাকৃত টাকা আমি নাকি আত্মসাত করেছি, এই মর্মে উপদেষ্টা মোস্তাকিম বিল্লাহ’র নির্দেশনায় মাদ্রাসার সভাপতি আলী আকবর মোল্লা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট। যার কারনেই মোস্তাকিম বিল্লাহ এখন আমার ৩ লক্ষ টাকা দিতে তালবাহানা করিতেছে। এছাড়া সহজ কুরআন শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ বাবদ বিনোদপুর ইউনিয়নের মৌলভী কান্দি জামে মসজিদের কেন্দ্র শিক্ষক জয়নাল আবেদীন থেকে আমি নাকি ৯ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করি এবং আরও ১০ টি মসজিদের ইমাম ও খতিব থেকে নাকি ৯ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়োগ দিবো বলিয়া গ্রহণ করি। যা ২০১৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন সহকারী উপ-পরিচালক আ: রাজ্জাক রনি, হিসাবরক্ষণ অফিসার নুরুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে মিথ্যা প্রমানিত হয়। পূনরায় মোস্তাকিম বিল্লাহ’র সহযোগিতায় আমার বিরুদ্ধে সদর উপজেলা নির্বাহী বরাবর এমনই একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষক জয়নাল আবেদীন। যা একটি মিথ্যা অভিযোগ। এ মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে আটং ও কাগদীর মসজিদভিত্তিক অভিযোগকারী ১০টি মসজিদের ইমাম ও খতিবকে নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করতেছি, যাতে করে সংবাদের মাধ্যমে অভিযোগকারী ১০টি মসজিদের ইমাম ও খতিব তাদের অভিমত প্রকাশ করতে পারে। এমদাদুল হক আরও বলেন, এ অভিযোগের কারনে আমার সম্মান ও মানহানি হয়েছে। এজন্য প্রশাসনের নিকট উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ১০টি মসজিদের ইমাম ও খতিবকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, এমদাদুল হক-এর বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ নেই এবং মাওলানা এমদাদুল হককে কোন টাকা-পয়সা আমরা দেইনি। অভিযোগকারী জয়নালকে আমরা চিনি না। জয়নাল আমাদের মাধ্যমে এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি পেশ করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এজন্য জয়নালের শাস্তি দাবি করছি।
জয়নাল আবেদীনকে এ বিষয়ে বারবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মোস্তাকিম বিল্লাহ’কে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল করা হলে তিনি সামনাসামনি এ বিষয়ে কথা বলবেন বলেছেন। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল টাইমে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
মোস্তাকিম বিল্লাহ’র বিষয়ে জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আ: রাজ্জাক রনি বলেন, ৩ লক্ষ টাকা পাওয়ানা ও লেনদেনের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে মাদ্রাসার প্রণোদনার ১০ হাজার টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মাষ্টার ট্রেইনার মোস্তাকিম বিল্লাহ মাদ্রাসার কথিত উপদেষ্টা এবং সদর উপজেলাধীন দক্ষিণ বালুচড়া রিয়াজুল জান্নাহ নাসির উদ্দিন কওমী মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী আলমগীর সরদারের ভাগ্নে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার ১০ হাজার টাকা মাদ্রাসার মুহতামিম এমদাদুল হক-এর মাধ্যমে নিয়েছিলেন। আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার ও উক্ত মাদ্রাসার মুহতামিম এমদাদুল হক শিক্ষা উপকরণ বই বাবদ ২ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করে আর বাকি ৭ হাজার ৩০০ টাকা আমার মাধ্যমে গত জানুয়ারি-২০২০ এ মাদ্রাসার উপদেষ্টা মোস্তাকিম বিল্লাহকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মোস্তাকিম বিল্লাহ উক্ত ৭ হাজার ৩০০ টাকা এক সপ্তাহ হাতে রেখে ফেরত দেয় এই মর্মে যে, কমিটি পুরো ১০ হাজার টাকা চায়। কেয়ারটেকার এমদাদুল হক আমার নির্দেশনায় পুরো ১০ হাজার টাকা দিতেই স্বীকৃতি জানায়। কিন্তু পরে মোস্তাকিম বিল্লাহ ও কমিটি উক্ত টাকা না নিয়ে মুহতামিম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে একটি আত্মসাতের অভিযোগ এনে সদর ইউএনও বরাবর আবেদন করে। যা তদন্তের মাধ্যমে ইউএনও মহোদয় ব্যবস্থা নিবেন।