শনিবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
শনিবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

আর কত বয়স হলে, গোলাপী পাবে বয়স্ক ভাতা

আর কত বয়স হলে, গোলাপী পাবে বয়স্ক ভাতা

বউয়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতে ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে নৌকায় মাকে নিয়ে থাকেন নুরু মিয়া। গ্রামে একাধিক শালিশ দরবার করে কোন সমাধান হয়নি। তাই বউ ছেলে রেখে মা কে নিয়ে বসবাস এখন তার জয়ন্তী নদীতে।

নুরু মিয়া বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা নির্বাহ করে জয়ন্তী নদীতে মাছ ধরে। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়েই দুই জনে চলে। মায়ের বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই হলেও এখন পান নি কোন সরকারি সুবিধা। এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্যদের কাছে ঘুরেও কাজ হয় নি। তাই এখন আর মায়ের বয়স্ক ভাতার জন্য কারও কাছে যাননা নুরু মিয়া।

নুরু মিয়ার (৫৩) মায়ের নাম গোলাপী (৮৭) স্বামী মোঃ আশ্রাফ আলী। থাকেন নৌকাতে, মাছ ধরে যা পায় তা দিয়ে ই মা ছেলের সংসার চলে। তারা দুইজন শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের ভোটার। নৌকা ই তাদের নিজস্ব বাসস্থান।

জয়ন্তী নদীর পাড়ে কথা হয় গোলাপী বেগমের সাথে। কুমিল্লায় অনেক জায়গা সম্পত্তির মালিক ছিলেন গোলাপীর বাবা। জায়গা সম্পত্তি পাওয়ার লোভে তার আপন চাচা তাঁকে ছোট সময়ে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করে দেয়। স্বামী ভক্ত গোলাপী স্বামীর নাম মুখে নেওয়া পাপ বলে তার নামটি মুখে নেয়নি।

গোলাপী বলেন, ৫০ এর প্রথম গন্ডগোল আমি স্বচক্ষে দেখেছি। অনেক ইতিহাস মনে আছে। যুদ্ধের সময় আমি আমার স্বামীকে নিয়ে নদীতে ছিলাম। স্বামী মরার পর এখনও সেই নদী আমার ঠিকানা।

গোলাপী আরোও বলেন, আমি ঢাকা এক বস্তিতে ছিলাম। ছেলে আমাকে জোর করে দেশে নিয়ে আসে। আসার পর থেকে ছেলের বউ আমাকে দেখতে পারে না। বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে দরবার সালিশ হয়। পরে ছেলে আমাকে নিয়ে নেমে পরে নৌকায়। আজ ১৩ বছর ধরে ছেলে আমার এই নৌকা দিয়ে মাছ ধরে যা রোজগার হয়, তাই দিয়ে সংসার চলে মা ছেলের। যদি কিছু না পায় তা হলে না খেয়ে থাকতে হয় আমাদের। এছাড়া উপায় কি আর আমাদের।

নুরু মিয়া বলেন, মায়ের ঢাকা থেকে আসার পর বউয়ের সাথে বনিবনা হয় না। সব সময় মায়ের সাথে ঝগড়া করেন। কখনও কখনও তাকে মারার জন্য তেরে আসতেন। আমি বাড়িতে থাকতাম না কাজ কাম করার জন্য চলে যেতাম। আসলে মা কাঁদতো আর বলত। কয়েকবার বলছে যে আমাকে যেখান থেকে আনছত সেখানে ই রেখে আস। তা হলে তুই ভাল থাকবি। আমি অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয় নি। কয়েক বার স্থানীয় দরবার হয়েছে। কিন্তু সব হয় বউ মানে না এতে সব শেষ হয়ে যায়। পরে মাকে নিয়ে নিজের টাকা দিয়ে বানানো নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ১২ থেকে ১৩ বছর হলো আজও বাড়ি ফিরি নাই। এখন নৌকায় মা ছেলে থাকি। আমি মাছ ধরি। এটা দিয়ে ই সংসার চলে।

সরকারি কোন সুবিধা পায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বার আর গণ্যমান্য কেউ বাকি নাই যে যাইনি। এখন আর চাই না। তারা মুখ দেখে দেখে দেয়। আমরা গরিব মানুষ কেউ ব্যবস্থা করে দেয় না।

ডামুড্যা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, এখন আর কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। অনলাইনে আবেদন করলে ই হয়। আমি গোলাপীর ব্যপারে জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীও ব্যবস্থা নিব।


error: Content is protected !!