Monday 30th June 2025
Monday 30th June 2025

শরীয়তপুরে দুর্বৃত্তের আগুনে ঝলসে গৃহবধূর জীবন সংকটাপন্ন

শরীয়তপুরে দুর্বৃত্তের আগুনে ঝলসে গৃহবধূর জীবন সংকটাপন্ন
শরীয়তপুরে দুর্বৃত্তের আগুনে ঝলসে গৃহবধূর জীবন সংকটাপন্ন। ছবি- দৈনিক রুদ্রবার্তা

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় এক গৃহবধূর শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগুনে ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যাওয়ায় যন্ত্রণায় হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন তিনি।

ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে ওই গৃহবধূকে বিয়ে করার জন্য উত্ত্যক্ত করছিলেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাশেল পাহাড়। তিনি রাজি না হওয়ায় ওই যুবক গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

গৃহবধূকে অগ্নিদগ্ধ করার ঘটনায় তাঁর বোন বাদী হয়ে সদরের পালং মডেল থানায় রাশেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ এখনো তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশ ও ওই নারীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর বাবা বেঁচে নেই। মা ও ছোট বোনের সঙ্গে দুই শিশুসন্তান নিয়ে তিনি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী যশোরে ব্যবসা করেন। তিন-চার মাস ধরে তাঁদের প্রতিবেশী রাশেল গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করছিল। তাঁকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিত এবং নানা ধরনের কুপ্রস্তাব দিত। এ জন্য গৃহবধূ ওই যুবককে এড়িয়ে চলতেন। এতে ক্ষুব্ধ হন রাশেল।

শনিবার রাত নয়টার দিকে গৃহবধূ বসতঘরের বাইরে এলে বাড়ির পাশে ওত পেতে থাকা রাশেল পাহাড় ও তাঁর এক সহযোগী গৃহবধূর মুখ চেপে ধরেন। এরপর তাঁকে বাড়ির পাশের বাঁশবাগানে নিয়ে বাঁশের সঙ্গে তাঁর পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ছুটে আসেন। তাঁকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে দ্রুত সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি ওয়ার্ডের একটি শয্যায় মশারি টানিয়ে ওই গৃহবধূকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি।

সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক কাজী শাহ মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওই গৃহবধূর শরীরের ১০ থেকে ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। আমরা তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছি। তিনি শঙ্কামুক্ত, তবে সুস্থ হতে সময় লাগবে। আপাতত কিছুদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘রাশেল আমাকে বিরক্ত করত। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে নানা বাজে ইঙ্গিত করত। আমি তাঁকে প্রশ্রয় দিতাম না। কয়েক দফায় আমি তাঁকে বিরক্ত না করার অনুরোধ করেছি। আমার স্বামী ও দুই সন্তান আছে এমন কথা জানার পরও রাশেল বিরক্ত করত। শনিবার সে তাঁর এক সহযোগীকে নিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর বাঁশের সঙ্গে বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

রাশেল পাহাড়রা এলাকায় প্রভাবশালী মন্তব্য করে ওই গৃহবধূর ছোট বোন বলেন, ‘আমার বোনকে সে উত্ত্যক্ত করত। ওদের বিরুদ্ধে কোথাও বিচার দেওয়ার সাহস পাইনি। আমরা গরিব মানুষ। বাবা-ভাই নেই তাই অসহায়। এমন অবস্থার সুযোগ নিয়ে রাশেল আমার বোনকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়।’

গৃহবধূর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিযোগটির তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।