Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

শরীয়তপুরে সাংবাদিককে জীবন নাশের হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

শরীয়তপুরে সাংবাদিককে জীবন নাশের হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪, দৈনিক যায়যায়দিন শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি, সাহসী সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলামকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যার হুমকি প্রদানকারী শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জিয়াউর রহমানের প্রত্যাহার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান (উপসচিব) কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
২৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) শরীয়তপুর জেলা শাখা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শরীয়তপুর জেলা শাখা, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা, শরীয়তপুর ইলট্রোনিক মিডিয়া জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। পরে তারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ সময় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি এম.এ ওয়াদুদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ও ডিবিসির প্রতিনিধি বিএম ইশ্রাফিল, সহ-সভাপতি ও জাগো নিউজের প্রতিনিধি মো. ছগির হোসেন, সহ-সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রতিনিধি মো. কবিরুজ্জামান, সহসভাপতি টিএম মোস্তফা, জিটিভির প্রতিনিধি মো. মানিক মোল্যা, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিনিধি খালেক পেদা ইমন, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস, নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রতিনিধি রতন মাহমুদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ, শরীয়তপুর জার্নালের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুরাদ মুন্সী, অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, একুশে টেলিভিশন ও দৈনিক জনকন্ঠের প্রতিনিধি আবুল বাশার, শরীয়তপুর ইলেট্রোনিক মিডিয়া জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এটিএন নিউজ, এটিএন বাংলা এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাভিশনের প্রতিনিধি শহীদুজ্জামান খান, চ্যানেল আই ও বাসসের প্রতিনিধি এসএম মজিবুর রহমান, এনটিভি ও দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ শিশির পেদা, চ্যানেল ৯ টেলিভিশনের প্রতিনিধি মনির হোসেন সাজিদ, মোহনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান, ডা. নজরুল ইসলাম রিপন, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তার হোসেন সবুজ তালুকদারসহ জেলার ইলেট্রোনিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক, অ্যাডভোকেট, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা ইউএনও’র প্রত্যাহার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। তাকে দ্রুত প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ‘টি আর কাবিখা, কাবিটা এবং জি আর’ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সম্প্রতি সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন ইউএনও জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব প্রকল্প বলে খ্যাত ‘ভিটা আছে ঘর নেই’ এমন হতদরিদ্র লোকদের গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৫০০ জন দরিদ্র লোককে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়ম-নীতি লংঘন করা হচ্ছে মর্মে তথ্য পেয়ে সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম ও তার সহকর্মীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রকল্পের প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে অনিয়ম হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথাও উঠে আসে। ইউএনও কর্তৃক সম্পাদিত অনিয়ম বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে জানতে পেরে ইউএনও জিয়াউর রহমান সাংবাদিক কাজী নজরুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তার সহকর্মীদের মারফত নানা ধরনের গালিগালাজসহ তাকে জীবন নাশেরও হুমকি দিতে থাকেন।
গত ২০ জুলাই শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় ইউএনও জিয়াউর রহমান শরীয়তপুর সদর উপজেলা চত্বরে চলমান বৃক্ষ মেলার একটি স্টলে বসে ডিবিসি নিউজের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি বিএম ইশ্রাফিলকে ডেকে নিয়ে তার কাছে অযাচিত ভাষায় উচ্চ স্বরে নজরুলকে গালিগালাজ করেন এবং তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন
এরপর ২১ জুলাই দুপুর দেড়টার সময় শরীয়তপুর জেলা শহরের দুবাই প্লাজায় অবস্থিত চিকন্দী ফুড পার্কে একটি জনাকীর্ণ পরিবেশে বিএম ইশ্রাফিলের কাছে পুনরায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কাজী নজরুলকে গালিগালাজ করতে থাকেন ইউএনও জিয়াউর রহমান।
এক পর্যায়ে তিনি বিএম ইশ্রাফিলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সাংবাদিক নজরুলকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো। ওর মত সাংবাদিককে মেরে ফেললে কিছুই যায় আসে না। আমার নাম জিয়াউর রহমান। আমি যা বলি তা করে দেখাই। ওকে আমার অফিসে নিয়ে হাত পা বেঁধে অফিস থেকে লাথি মারতে মারতে নিচে ফেলে দিব। এছাড়াও তিনি নজরুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দেন ইউএনও। এছাড়া সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম ওই বিষয়ে জানতে ইউএনওকে মোবাইলে কল দিলে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেয় ইউএনও।
ওই ঘটনায় সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম ইউএনও মো. জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পালং মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।