
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) শরীয়তপুর কার্যালয়ে অস্থায়ী নিয়োগকৃত রাজিব শিকদার (৩৫) ও নজরুল ইসলাম (৪৫)। কে যানে তারা বিনা বেতনে চাকরি করেন। বিআরটিএ তে আসা গ্রাহককে সেবা দেন নজরুল ও রাজিব। বিনিময়ে গ্রাহক খুশি করেন তাদের।
গ্রাহক টাকা দিয়েই খালাস! একজন গ্রাহকের ব্যংকড্রাফ, কাগজ সত্যয়িত, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এসব কাজ করে দেন তারা। বিনিময়ে তাদের সরকারি ফি ছাড়াও খুশি হয়ে কিছু বাড়তি টাকা নেন। যে স্টাফ টাকা নিয়েও কাজ করেনা, ঘুরাঘুরি করায় মূলতঃ সেই লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মানুষ।
তেমনি একজন রাজিব শিকদার, যার নামে গ্রাহক হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। দ্বিগুণ টাকা নিয়েও ভোগান্তির অভিযোগে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট হয় তার বিরুদ্ধে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আসলে রাজিবকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেন।
রাজিব শিকদার স্থানীয় হওয়ায়, হিংসারবশবর্তি হয়ে তার সহপাঠী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩/৪ দিন পর যমুনা টেলিভিশনে বিআরটিএ নিয়ে একটি রিপোর্ট হয়। সেখানে দেখা যায়, অফিসের ভেতর নজরুল ইসলাম তার চেয়ারে বসে কাজ করছেন। সে সময় এক ব্যক্তি তাকে টাকা দিচ্ছে। এবং সে টাকা গ্রহণ করছে। এই ভিডিও ফুটেজ দিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এমন সংবাদ হওয়াতে নজরুল ইসলাম কেও চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সূত্রে জানা যায়,সীল কনট্রাকটার পদে নিয়োগকৃতদের কোন বেতন নাই। সব জেলায় বিআরটিএ তে এই সীল কনট্রাকটার পদে নিয়োগ আছে। কিন্তু করেন পিয়নের কাজ।
এ বিষয়ে সিল কন্ট্রাকটর পদে নিয়োগকৃত নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে সরকারী সীল কন্ট্রাক্ট নিয়েছি এই স্বার্থে যে,আমরা সরকারের কাছ থেকে বেতন নিবো-না। দেশের সব জেলাতেই এই পদে লোক আছে।
রাস্তায় গাড়ির গতি কমানোর কন্ট্রাক্ট নিয়েছি। যে গাড়িটা দেড়’শ দুই’শ গতিতে চলে। আমারা সেই গাড়িটা সীলগালা করে দিবো। যেন নির্দিষ্ট গতির উপরে গাড়ি না চলতে পারে। এক কথায় এই কাজের ঠিকাদার।
বাংলাদেশে এখনো এরকম রোড হয় নাই। যে রোড দিয়ে এতো দ্রুত গতির গাড়ি চলবে। এই রোড হয় নাই বিধায়। অফিসের পিয়নে যে কাজ করে। আমরাও সেই কাজ করি। এই করে কোন রকম চলে। অফিসে আসা একজন সেবা প্রার্থীর সার্বিক সহযোগিতা করি। খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়েই চলি।
কিভাবে বেতন ছাড়া কাজ করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সীল কন্ট্রাক্টটার নজরুল ইসলাম দৈনিক রুদ্রবার্তা কে বলেন, সীল কন্ট্রাক্টটার হিসাবে আমাদের কোন কাজ নেই। মানুষকে সেবা দেই, বিনিময়ে তারা খুশি হয়ে টাকা দেয়।
তবে সব জেলাতে এই পদে লোক আছে। কাজের ভেতর শুধু ঢাকাতে কিছু কাজ করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নামীদামি যে কয়টা গাড়ি আসে বেশীর ভাগ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার হয়।
আমার ৩ মেয়ে এক ছেলে। পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকি। আমার বিরুদ্ধে কেউ বলতে পারবে না আমি কারও সাথে খারাপ করেছি। বরখাস্ত হওয়াতে আমি দিশেহারা হয়ে গেছি। কি করবো বুঝতে পারছিনা।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক কাজী মনির আমার কাছে শো’রুমের একটা হুন্ডার কাগজ করতে এসেছিল। আমি নোটিশ বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী শো’রুমে যেতে বলেছিলাম। আমি এখান থেকে চলে গেলে অনেক গ্রাহক হয়রানি হবে। আমার কাছে অনেক গ্রাহকের কাগজপত্র রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে পাওয়া যায়, ফুটেজে টাকা দেয়া সেই মানুষটিকে। তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান তিনি দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, নজরুলের কাছে মটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য জমা সরকারী ফি বাবদ জমা ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। আমি তাকে দিয়েছি ২১ হাজার ৩০০ টাকা। অটোরিকশা ভাড়া বাবদ ২৩ টাকা বেশী দিয়েছে। সে যথেষ্ঠ ভালো লোক। আমি তাকে অনেক অনুরোধ করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে দিয়েছি।
আরেক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে সে সাংবাদিক কাজী মনিরুজ্জামানের আত্মীয় সুমন। তিনি মোটরসাইকেল লার্নারের জন্য ৫১৮ টাকা জমা দেয়ার পরিবর্তে, সেখানে সে ১৮ টাকা কম দিয়ে ৫০০ টাকা দেন।
সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউনুছ আলী চৌকিদার বলেন, আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়েছিলাম, ফর্ম পূরণ সহ নিয়মকানুন জানিয়ে দিয়েছেন। আমি সে অনুযায়ী কাজ করেছি। সর্বশেষ পুলিশ ভেরিফিকেশন করে দেয়ার জন্য ৫০০ টাকা সেধে ছিলাম। তিনি তাও নেয় নি। বলেছে আপনার কাছে গেলে দিয়ে পারেন, না দিয়ে পারেন, আপনি বুঝবেন।
শরীয়তপুর ধানুকা গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএ’র নজরুল ইসলাম তিনি নিয়মকানুন বলে দিয়েছে। আমি সেই অনুযায়ী সব কিছু করেছি। লর্নার কার্ড, পরিক্ষা, ফিঙারিং এর সময় গুলোতে তিনি ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি আমার কাছে টাকার আবদার করেন নাই।
রাজগঞ্জের ইউনুস আলী বেপারী বলেন, আমাকে অফিসিয়াল নিয়মকানুন মতো সব সহযোগিতা করেছে। আমি শুধু তাকে চা খাইয়েছি। কাজের বিনিময়ে কোন টাকার দাবী করেন নাই।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলাল খান জানান, আমার ছেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়েছিল। নজুেল ইসলাম সব কাজে সর্বিক সহযোগীতা করেছে। ফোন দিয়ে লার্নার কার্ড থেকে শুরু করে স্মার্ট কার্ড দিয়েছে। আমার ছেলের কাছ থেকে কোন টাকা নেয় নি। আমি ছেলেকে জিঙ্গাসা করেছিলাম আমার কথা বলেছো কিনা? ছেলে বলেছে না। আমি অবাক হয়েছিলাম। এই নজরুল ইসলাম ফোন দিয়ে লাইসেন্স দিয়েছে।
এদিকে মটরযান পরিদর্শক বিআরটিএ জিএম নাদির হোসেন দৈনিক রুদ্রবার্তাকে জানান, নিউজ হওয়ার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখছে, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান দেখছে। হেড কোয়াটার এর প্রশাসন দেখেছে। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
সিস্টেম যেখানে খারাপ এখন তারা পরিবার নিয়ে কি ভাবে চলবে। এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তারপর দেখা যাবে।