
স্বজনরা জোর করে কিশোরী জুই আক্তার শিলার (১৬) বাল্যবিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু শিলা কিছুতেই এ বিয়েতে রাজি ছিলোনা। কিন্তু মা ও স্বজনরা কিছুতেই পাত্র হাতছাড়া করতে চাইছিলোনা। পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্য বিবাহ বিরোধী টিমের সদস্যরা এ খবর জানতে পেরে ঘটনাটি শরীয়তপুরর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখকে জানায়। অবশেষে ইউএনও মাহাবুর রহমানের হস্তক্ষেপে বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় কিশোরী জুই আক্তার শিলা। পাশাপাশি শিলার লেখাপাড়া ও কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেয় উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, জুই আক্তার শিলার বাবা কিশোরগঞ্জের জামাল বেপারী ও মা শরীয়তপুরের মুক্তা বেগম। ঢাকায় জামাল বেপারী ও মুক্তা বেগমের পরিচয় হওয়ার পর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। চার ভাই বোনের মধ্যে শিলা দ্বিতীয়। শিলার বয়স যখন ৬ বছর তখন তার বাবা জামাল বেপারী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে শিলার মা মুক্তা বেগম শিলাকে ঢাকায় তার চাচাতো বোনের কাছে এবং বাকি তিন সন্তানকে তাদের খালার কাছে গ্রামের বাড়িতে রেখে বিদেশ চলে যায়। শিলা তার চাচতো বোনের কাছে থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করে দুই বছর আগে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। বিদেশ থেকে গত ১ বছর পূর্বে দেশে আসে শিলার মুক্তা বেগম। দেশে আসার পর শরীয়তপুর পৌরসভার প্রেমতলা এলাকার জলির খার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে শিলা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে বসবাস করে মুক্তা বেগম। এরই মধ্যে শিলার বড় বোনের বিয়ে হয়ে। এক ভাই কোন একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছে। প্রেমতলা বাসা ভাড়া নেয়ার পর মুক্তা বেগম প্রেমতলা বিসিকে বেকারীর কারখানায় সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে।
এ দিকে শিলার খালাতো বোন লাকি আক্তার শিলার জন্য একটি পাত্র ঠিক করেন। পাত্র শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরডোমসার মোল্যা কান্দি গ্রামের আলাল উদ্দিন মোল্যার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্যা (২৬)। শিলার মাও এ বিয়েতে রাজি ছিলেন। কিন্তু শিলা কিছুতেই এ বিয়েতে রাজি ছিলো না। পরে খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমানের নির্দেশে পাত্র জাহাঙ্গীর মোল্যা, জুই আক্তার শিলা, শিলার মা মুক্তা বেগম ও খালাতো বোন লাকি আক্তারকে পালং মডেল থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে শিলাকে বিয়ে না করা ও তার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করার শর্তে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরকে। একই ভাবে শিলাকে আঠারো বছর না হতে বিয়ে না দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দেন শিলার মা ও খালাতো বোন। এভাবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখের হস্তক্ষেপে বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় জুই আক্তার শিলা। এছাড়া দরিদ্র শিলার লেখাপাড়া, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান শেখ, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হাশেম তপাদার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিনিয়া জিন্নাত সহ উপজেলা প্রশাসন।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, শিলার স্বজনরা শিলাকে জোর করে বাল্য দিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু শিলা এ বিয়েতে রাজি ছিলো না। পালং স্কুলের বাল্যবিবাহ বিরোধী টিমের সদস্যদের মাধ্যমে জানতে পেরে শিলাকে বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা করা হয়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিলার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের জন্য শিলাকে মহিলা সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষন ও সেলাই মেশিন দেওয়া হবে।