
(ছবি-৫)
রুদ্রবার্তা প্রতিবেদক ॥ শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় মুঠোফোন চুরির অপরাধে এক প্রতিবন্ধী যুবককে সৌরবিদ্যুতের স্ট্রিটলাইটের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক নারী ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে। ওই যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি মেম্বার নাজমা বেগমের (৪৮) বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন নির্যাতন হওয়া যুবকের বড় ভাই। মামলা হওয়ার পর নাজমাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নাজমা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও ওই ইউনিয়নের আতলাকুড়ি গ্রামের মৃত ফসু জমাদ্দারের স্ত্রী।
নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির নাম আব্দুল কাদের চৌকিদার (২৬)। তিনি উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের ধানকাঠি গ্রামের মোতালেব চৌকিদারের ছেলে। তিনি একজন মানুষিক প্রতিবন্ধী।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন নির্মাণ হচ্ছে ডামুড্যা উপজেলা মডেল মসজিদ। মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণ শ্রমিকের (কনেশ্বর এস.সি এডওয়ার্ড ইনিস্টিউটে) থাকার কক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি মোবাইল ও চারটি চার্জার চুরি হয়। আবার গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে ওই কক্ষ থেকে আরও একটি মোবাইল চুরি হয়। ওইদিন প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদের চৌকিদারকে কক্ষের কাছে আনাগোনা করতে দেখলে নির্মাণ শ্রমিকদের সন্দেহ হয়।
তাৎক্ষণিক শ্রমিকরা আব্দুল কাদেরকে ধরে। পরে মেম্বারের নির্দেশে তাকে কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি সৌরবিদ্যুতের স্ট্রিটলাইটের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধে। এ সময় ইউপি মেম্বার নাজমা বেগম আব্দুল কাদেরকে একটি লাঠি দিয়ে মারধর করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে মারধরের ওই ভিডিও ‘আমাদের শরীয়তপুর’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল হয়।
৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড’র ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক আব্দুল কাদেরকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাকে ঘিরে রেখেছেন লোকজন। মোবাইল কোথায় রেখেছেন তা জানতে চাচ্ছেন ইউপি মেম্বার নাজমা। তার হাতে গাছের একটি ডাল। তিনি সেটি দিয়ে আব্দুল কাদেরের শাসাচ্ছেন এবং তার সঙ্গে ‘তুই তুকারি করছেন’। একপর্যায়ে ডাল দিয়ে কাদেরকে একবার মৃদু প্রহার করতে দেখা যায় নাজমাকে।
প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদের চৌকিদারের বড়ভাই রেজাউল করিম সান্টু মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাইকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের বিষয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে এখন সবাই জানে। তাই আমি বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ডামুড্যা থানায় নাজমা বেগমকে মূল আসামী করে অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
শিরাজ ব্যাপারীসহ এলাকার অনেকেই বলেন, ওই ব্যক্তিকে বেঁধে মারা তার ঠিক হয়নি। যেহেতু তিনি একজন মেম্বার। এমন কাজ মেম্বারের কাছ থেকে আসা করিনি।
কনেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বাচ্চু মাদবর বলেন, মসজিদ ভবনের কাজ করে ওই শ্রমিকদের মোবাইল চুরি করে ওই যুবক। তাই শ্রমিকরা যুবককে আটক করে একটি সৌরবিদ্যুতের স্ট্রিটলাইটের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে। পরে মেম্বার নাজমা এসে শ্রমিকদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে এবং মেম্বার ওই যুবককে জিজ্ঞেস করে, তুই নাকি আরও মোবাইল চুরি করছোস সত্য কথা বল। তাহলে তোকে ছেড়ে দেব। যুবকটি মূলত পেশাদার চোর না। সে প্রতিবন্ধী একজন লোক। এ বিষয়টি ইউএনও মহোদয় কিন্তু জানেন।
গোসাইরহাট সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা জানতে পারি, মোবাইল চুরির অভিযোগে ৩০ বছরের একজন ব্যক্তিকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। জানতে পারার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এর সঙ্গে একজন মহিলা মেম্বার জড়িত আছে বলে জানতে পারি। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আর যারা এর সঙ্গে জড়িত আছে তাদের তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।
ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মর্তুজা আল মুঈদ বলেন, নাজমা কনেশ্বর ইউনিয়নের একজন নির্বাচিত ইউপি সদস্য। তার একটি ভিডিও দেখেছি। বৃহস্পতিবার ওই ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা মিটিং ছিল। প্রসঙ্গক্রমে মিটিংয়ে ওই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। জানতে পারি, ওই ব্যক্তি শ্রমিকদের দুটি মোবাইল চুরি করে, একটি মোবাইল ফিরতও দিয়েছে। আরেকটি মোবাইলের জন্য শ্রমিকরা তাকে চাপ প্রয়োগ করছিল। তখন শ্রমিকরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় ও মারমুখী হয়। তাকে বেঁধে রাখে। তখন ইউপি সদস্য নাজমা বাঁধা দেয়। পরবর্তিতে নাজমা যা করেছে সেটা কাম্য নয়। তিনি ওই ব্যক্তিকে গালাগাল করেছেন এবং লাঠি দিয়ে মৃদু আঘাত করছেন। এটা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ও লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে সমাধান করা যেত।