
এই প্রথম দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম পদ্মা সেতু রেললাইন প্রকল্প ও শেখ হাসিনা তাঁত পল্লীর প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের জন্য এই দুই প্রকল্পে অবৈধ ঘর-বাড়ি স্থাপনা গাছ-পালা লাগানোর খবরে দুদকের এই টিমটি মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরা অংশ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তারা নির্মিত বিভিন্ন ঘর-বাড়ি ও বাগানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা সরেজমিনে ঘুরে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দুদকের প্রতিনিধিদলটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। তাঁত পল্লীর অবৈধ স্থাপনা নিয়েও একাধিক সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হয়।
জানা যায়, পদ্মা সেতু রেললাইন প্রকল্প সম্প্রসারণের খবরে ও শেখ হাসিনা তাঁত পল্লীর শিবচর, জাজিরাসহ প্রস্তাবিত এলাকায় শতশত অবৈধ ঘর-বাড়ি, স্থাপনা নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের পাঁয়তারা করছে এক শ্রেণির অসাধু দালালচক্র। এ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পাওয়া ও দুদকের হটলাইন ১০৬ এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর ও শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা অংশের পদ্মা সেতু রেললাইন প্রকল্প ও শেখ হাসিনা তাঁত পল্লীর প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে দুদক কর্মকর্তারা এ দুটি মেগা প্রকল্প এলাকায় শতশত অবৈধ ঘর-বাড়ি, স্থাপনা দেখে হতাশা প্রকাশ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।
দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কমলেশ মন্ডল, উপসহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা ও সৌরভ রায় প্রমুখ। এ সময় শিবচর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির নেতৃবৃন্দও তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপসহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা বলেন, পরিদর্শনে এসে আমরা লক্ষ্য করছি পদ্মা সেতুর রেল লাইন সম্প্রসারণ ও তাঁত পল্লীর প্রস্তাবিত এলাকায় শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও গাছপালা লাগিয়েছে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য। অথচ এ সকল ঘরবাড়িতে কেউই থাকে না। তাঁত পল্লীর শিবচর অংশে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ হয়েছে। এই দুই প্রকল্পে আমরা যে অনিয়মটা দেখে গেলাম তা দুদক প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট আকারে পেশ করব। এর সাথে যারা জড়িত ও চক্রের হোতাদের বিষয়টি আমরা রিপোর্টে উম্মোচিত করব। এ এলাকায় আমরা তদন্ত শুরু করলাম। এখন থেকে তদন্ত ও অভিযান চলবে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-শরীয়তপুরের জাজিরা-মাদারীপুরের শিবচর-ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের জন্য ৩৫৮.৪১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ হয়। সম্প্রতি রেল লাইন সম্প্রসারণের খবরে শিবচরসহ প্রকল্প এলাকাজুড়ে শত শত অবৈধ ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ গাছ-পালা লাগায় অসাধু চক্র। আর গত বছরের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯১১ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির জন্য মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ৬০ একর ও শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় ৪৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়। এ প্রকল্প এলাকায়ও সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে অসাধু চক্র শত শত ঘর-বাড়িসহ অবৈধ স্থাপনা খামার গাছ-পালা বাগান তৈরি করে।
সম্প্রতি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শন করে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলে শিবচর অংশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। তবে এখনো জাজিরার নাওডোবা অংশে স্থানীয়রা কিছু ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিলেও প্রশাসনিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি বলে জানায় স্থানীয়রা।