Monday 30th June 2025
Monday 30th June 2025

জাজিরায় ব্রিজের উপর বাঁশের সেতু ভেঙ্গে সীমাহীন দুর্ভোগ ২০ গ্রামের মানুষের

জাজিরায় ব্রিজের উপর বাঁশের সেতু ভেঙ্গে সীমাহীন দুর্ভোগ ২০ গ্রামের মানুষের

সেতু ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ৫ বছর। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুই দফায় এই বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সেতুর উপর বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গেছে ১০ দিন হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাজারও মানুষের চলাচল। তবুও জনপ্রতিনিধিদের কোন তৎপরতা নেই। এমন অবস্থায় গর্ভবতী মা সহ অসুস্থ রোগীদের মৃত্যু ছাড়া পথ নেই।
সেতুটির অবস্থান শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আলী বক্স মাদবরকান্দি গ্রামে। এই সেতুটি নিয়ে জনদূর্ভোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও কোন জন-দরদী নেতার কানে পৌঁছেনি।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সড়কটি ছিল একটি পাকা সংযোগ সেতু। পাঁচ বছর আগে বন্যার পানির ¯্রােতে সেতুটি একেবারেই বিধ্বস্ত হয়ে যায়। পরে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন সহ জন-চলাচল।
এরপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দুই দফায় ওই সেতুর উপর দিয়ে বাঁশের মাচার সাঁকো নির্মাণ করা হয়। সেই সাঁকো দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও মানুষ চলাচল করতে পারতো। সপ্তাহ খানেক আগে সেই বাঁশের সেতুটি পূণরায় ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে মানুষের চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ।
জাজিরা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলা সদর থেকে পালেরচর বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ইটের সড়ক রয়েছে। বড়কান্দি, পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা এবং কুন্ডেরচর ইউনিয়ন থেকে জাজিরা উপজেলায় যাওয়া এবং আসার সুবিধার্থে বড়কান্দি ইউনিয়নের আলিবক্স মাদবরকান্দি গ্রামের খালের ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়।
২০১৪ সালের বন্যায় সেই সেতুটি ধ্বসে যায়। ফলে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পায়ে হেঁটে চলাচল করার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই স্থানে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে সেটিও ভেঙ্গে যায়। এরপর আবার বাঁশ দিয়ে সেতুটি সংস্কার করা হয়। গত আট দিন আগে সেই কাঠের সেতুটি আবার নতুন করে ভেঙ্গে যায়। এখন সেতুটি দ্রুত সংস্কার না করায় ২০টি গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
আলিবক্স মাদবরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার মাদবর বলেন, সেতুটি ভেঙ্গে গেছে পাঁচ বছর হলো, এখনও পুননির্মাণ বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ এই সড়কটি দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। আমরা কৃষক, চরের মানুষ বলেই কী আমাদের এতো অবহেলা ?
মুন্সিকান্দি গ্রামের শাহিনুর রহমান বলেন, সেতুটি ভাঙ্গা থাকায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নেয়া যায় না। এ কারণে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
চেরাগ আলী সরদারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সাহাদাত হোসেন বলেন, একটি সেতুর কারণে সড়কটি অচল। পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। গ্রামবাসীর সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় অসুস্থ রোগী নিয়ে। ডেলিভারী রোগী সহ যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য অনেক অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এলজিইডি’র কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। দুই দফা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কাঠের সেতু নির্মাণ করে দেয়া হয়েছিল। এখন উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে পুণরায় কাঠের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী বিমলেন্দু রায় বলেন, উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল হতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাঠের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ করছেন না। ৩০ জুনের মধ্যে ঠিকাদার কাজ শুরু না করলে পুণরায় সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।