শনিবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
শনিবার, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

সরকারি ব্রীজে আওয়ামী লীগ নেতার গেট : সাধারণ মানুষের চলাচলে বাঁধা

সরকারি ব্রীজে আওয়ামী লীগ নেতার গেট : সাধারণ মানুষের চলাচলে বাঁধা

শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চাকধ গ্রামে বসবাস করেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব হোসেন সেলিম ব্যাপারী। তার বাড়ির উত্তর পাশে রয়েছে সরকারি খাল। খালের পাশে নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়ক। ওই গ্রামবাসীর কথা চিন্তা করে সরকারি অর্থ খরচ করে খালের ওপর একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই সেতুটি সেলিম একাই ব্যবহার করছেন। তিনি সেতুটিতে বিলাশ বহুল পাকা গেট করছেন।

এলাকাবাসী ও সেতুটির নেম প্লেট থেকে জানা যায়, ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সেতু নির্মাণ প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৩২ টাকা ব্যয়ে নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চাকধ গ্রামের সেলিম ব্যাপারীর বাড়ির নিকট একটি সেতু তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার অর্থাৎ ৪৫ ফুট। প্রকল্পটির নাম রাখা হয় ‘সেলিম ব্যাপারীর বাড়ির নিকট খালের ওপর সেতু নির্মাণ’।

রোববার ১২ জুলাই দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চাকধ গ্রামটিতে সরকারি অর্থে দুইটি সেতু ও পাচঁটি কাঠের পোল তৈরি করা হয়েছে। গ্রামটিতে সেলিম ব্যাপারীর বাড়ি। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য সেলিমের বাড়ির প্রবেশ দ্বারে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। সেতুটির পাশে কোন রাস্তা নেই। সেতুটির শেষ ভাগে অর্থাৎ সেলিমের বাড়িতে ঢোকার প্রান্তে ইট, সিমেন্ট ও রড দিয়ে একটি গেট করা হচ্ছে। যার প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গেটটি সেতুর গাইড ওয়ালের ওপর এবং রেলিংয়ের সঙ্গে জোড়া লাগানো। যাতে করে সেলিমের ওই বাড়িতে বহিরাগত এবং গবাদি পশু ঢুকতে না পারে। সেলিমের পরিবার ব্যতীত অন্য কেউ যেন সেতুটি ব্যবহার করতে না পারে। তার জন্য সেতুটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পাকা গেট।

কোনো বহিরাগত যাতে ব্রীজ দিয়ে চলাচল করতে না পারে, তাই গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেলিমের বাড়ির সেতু দিয়ে অন্য কোনো বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ নেই। একক ব্যবহারের জন্যই মনে হয় নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। অবশ্য সেতুটির ৫০০ গজের মধ্যে আরও একটি সেতু ও পাঁচটি কাঠের পোল রয়েছে। যা দিয়ে এলাকার জনসাধারণ যাতায়াত করে। অন্যদিকে সেতুর নেম প্লেটটি একটি গাছের গুড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব হোসেন সেলিম ব্যাপারী। তিনি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি।

মাহবুব হোসেন সেলিম ব্যাপারী বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকার আমাকে খালের ওপর এই ব্রীজটি করে দিয়েছে। এই ব্রীজ দিয়ে কেউ যাতায়াত করে না। শুধু আমার পরিবারের লোক যাতায়াত করে। তাই ব্রীজের পাশে ও বাড়ির সামনে গেট করছি।

এ বিষয়ে ভূমখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিএম শাহ্জাহান সিরাজ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের আইনে পাকা গেট করার নিয়ম নেই। সরকারি ব্রীজে গেট করবে কেন? যারা গেট করে তারা পাগল ছাড়া কিছু না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকারি সেতুর উপর গেট করা যাবে না। আমরা পরিদর্শণে যাবো, ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, সরকারি সেতুর ওপর পাকা গেটের কথা শুনলাম। সেতুর ওপর গেট করা যাবে না। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


error: Content is protected !!