
শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে উচ্চ ফলনশীল তোষা পাটের জাত, বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) এর বিভিন্ন এগ্রোইকোলজিক্যাল জোনে এ্যাডাপটিভ গবেষণা প্রদর্শনীর উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় রুদ্রকর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী নারায়ণ গ্রামে এই মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
ফরিদপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজেআরআই এর পরিচালক (কৃষি) ড. মো. মুজিবুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন শরীয়তপুর খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবীদ মো. রিফাতুল হোসাইন, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এলাকার শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজেআরআই পরিচালক (কৃষি) ড. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, জীনতত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো পাটের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) বিজ্ঞানীরা। প্রচলিত জাতগুলোর তুলনায় ‘তোষা পাট-৮’ নামের এই জাতের পাটের ফলন প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ১০০ দিনেই কাটার উপযোগী হয় এই জাতটি। আমরা প্রত্যাশা করছি, কৃষক পর্যায়ে জাতটির প্রসার ঘটলে পাট উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। নতুন এই জাতের উচ্চতা প্রচলিত জাতের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। গাছের গোড়া ও আগার ব্যাসের পার্থক্য অপেক্ষাকৃত কম। গাছের ছালের ফাইবার ঘনত্বও বেশি। প্রচলিত জাতের চেয়ে এর আঁশ চিকন, বেশি উজ্জ্বল ও শক্ত। জাতটি আগাম বপন উপযোগী। বপন করা যাবে মার্চ ও এপ্রিলে। বপন করার ১০০ দিনের মাথায়ই কাটা যায় এই পাট। সেক্ষেত্রে এই জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৩ দশমিক ০৯ টন। তবে ১১০ দিনের মাথায় কাটলে ফলন পাওয়া যাবে ৩ দশমিক ১৬ টন। আর ১২০ দিন বয়সে হেক্টর প্রতি এর গড় ফলন ৩ দশমিক ৩৩ টন।
তিনি আরও বলেন, নতুন এ জাতের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমানো যাবে। ধীরে ধীরে আমদানি শূন্যের কোটায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ভারত থেকে জেআরও ৫২৪ জাতের পাট বীজ আমদানি করা হচ্ছে। এ আমদানি করা বীজের চেয়েও নতুন উদ্ভাবিত জাতের ফলনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। জাতটি ২০১৮-১৯ মৌসুমে ঢাকা, খুলনা ও রংপুরসহ তিনটি অঞ্চলের ১২টি স্থানে পরীক্ষা মূলক ভাবে বপন করা হয়েছে । সব স্থানেই ফলন বেশি পাওয়া গেছে। পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকার বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।’
ফরিদপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট ও পাটপণ্য তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে কেবল পাটজাত ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া দেশে অন্যান্য পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় সাতশ ১৬ দশমিক ৫২ কোটি টাকার। পাট দিয়ে তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, খেলনা, গহনা ও গহনার বক্সসহ ২৮৫ ধরনের পণ্য দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পাট এখন পশ্চিমা বিশ্বের গাড়ি নির্মাণ, পেপার অ্যান্ড পাম্প, জিওটেক্সটাইল হেলথ কেয়ার, ফুটওয়্যার, উড়োজাহাজ, কম্পিউটারের বডি তৈরি, ইলেকট্রনিক্স, মেরিন ও স্পোর্টস শিল্পে ব্যবহূত হচ্ছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার আগামী দ্ইু থেকে তিন বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বে তিনগুণ বেড়ে যাবে। নতুন জাতের আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে এ সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ।