
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মুখ বেঁধে রিওন শেখ (১৬) নামে এক কিশোরকে বেদম নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী সোহেল শেখের বিরুদ্ধে। গত ৫ জুলাই শুক্রবার রাত ৯টায় অভিযুক্ত সোহেল শেখের বাড়িতে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ঘটনা পরবর্তী গুরুতর আহত রিওনকে প্রথমে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আহত রিওনের পিতা জালাল শেখ ডামুড্যা থানায় অভিযোগ দাখিল করেছে বলে জানিয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে আহত রিওন ও তার পরিবার জানায়, রিওন ডামুড্যা উপজেলার ধনঐ গ্রামের দিনমজুর জালাল শেখের পুত্র। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় জালাল শেখের। তাই ছেলেকে হাই স্কুলে পঠাতে পারেনি। রিওন ছোট বয়স থেকেই দিনমজুর হিসেবে কাজ করত। রিওনের বয়স ১৬ হওয়ার পরথেকে রাজমিস্ত্রীরির হেল্পার হিসেবে কাজ করে। সমাজে রিওনের বিরুদ্ধে চুরি বা অপকর্মের কোন অধ্যায় নাই। গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকার সোহেল শেখের দ্বি-তল ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে সোহেল শেখ তার কর্মচারি রফিককে দিয়ে ৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যার পরে রিওনকে বাড়িতে ডেকে এনে কক্ষে বন্দি করে। পরে সোহেল শেখ ও তার সহযোগী আরজু বেপারী ও শাহিন মাদবর সোহেলের মুখ বেঁধে লোহার রড ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে রিওনের পিতাকে ডেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল দর্জীর উপস্থিতিতে হস্তান্তর করে। ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় রিওনের পিতা ডামুড্যা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।
নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে রিওন শিওরে ওঠে। একপর্যায়ে রিওন জানায়, আসিব সোহেল শেখের বাড়িতে থেকে কাজ করে আর আসিবই সেই বাড়িতে চুরি করে। আসিব রিওনের ছোট সময়ের বন্ধু ছিল তাই সন্দেহ করে রফিককে দিয়ে রিওনকে ডেকে নিয়ে সোহেল শেখ একটা কক্ষে বন্দি করে লোহার রড ও লোহার পাইপ দিয়ে পেটায়। রিওন ডাক চিৎকার করায় কক্ষের দরজা জানালা বন্ধ করে এবং মুখে কাপড় বেঁধে আবার নির্যাতন করে। এরপর কি হয়েছে তার মনে নেই। এখন রিওন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে কিন্তু ডান হাত ও ডান পা সে নাড়াতে পারছে না। রিওন ও তার পরিবার ধারণা করছেন কোথাও হাড় ভাঙ্গা যখম হয়েছে।
রিওনের চাচা মিন্টু শেখ ও পিতা জালাল শেখ বলেন, আসিব এর আগে থেকেই এলাকায় চুরি করার বদনাম আছে। সোহেল শেখ তার বাড়িতে আসিবকে আশ্রয় দিয়েছে। আসিবই তার বাড়িতে চুরি করেছে। আসিবের সাথে স্কুল জীবনে রিওনের বন্ধুত্ব ছিল সন্দেহে সোহেল শেখ লোক দিয়ে রিওনকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে অমানসিক নির্যাতন করেছে। পরে আমাদের ডেকে মেম্বারের উপস্থিতিতে সোহেল রিওনকে আমাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। তখন রিওন খুব অসুস্থ। বাসায় আনার পর আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন রিওনকে দ্রুত ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করি। পরে ডাক্তার রিওনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। রিওনের অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমি ডামুড্যা থানায় অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল শেখ বলেন, আমি চক্রান্তের শিকার। রিওন সম্পর্কে আমার ভাতিজা। ওকে যখন মারধর করা হয় তখন আমি রিওনকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হই। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান উজ্জল শিকদার ভালো জানে। তার সাথে আলাপ করলে হয়তো বুঝতে পারবেন আমি কেমন লোক। যদি আপনারা সংবাদ প্রকাশ করেন তাহলে আমার পরিচিতি বাড়বে। মানুষ আমাকে চিনতে পারবে।
ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম দর্জী বলে, সোহেল শেখ প্রথমে আমাকে তার বাসায় ডাকে। পরে রিওনকে ডেকে এনে আমার সামনেই মারধর করে থানায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন আমি সিদ্ধান্ত দেই থানায় দেয়ার দরকার নাই রিওনের বাবাকে ডেকে তার হাতে রিওনকে তুলে দিতে। সোহেল শেখ আমার কথা মতো রিওনকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়। পরে রিওনের পিতা থানায় অভিযোগ করেছে বলে শুনেছি।
ডামুড্যা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান বলেন, আহত রিওনের পক্ষে থানায় একটা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে যাদের ঘরে চুরি হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি।