
মর্মান্তিক দুই লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছি (৩৫) এর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শান্তনা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর-আল-নাসীফ। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহেরের নির্দেশক্রমে নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে এ টাকা প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতেও সরকারি সাহায্য অব্যাহত ও পরিবারের পুনর্বাসনে সাহায্য করা হবে মর্মে অবহিত করেছেন জেলা প্রশাসক।
শরীয়তপুরের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, নারায়ণগঞ্জের সীমানাধীন চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছির শোকাহত পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি ভেদরগঞ্জ ইউএনও’র মাধ্যমে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকাহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের সীমানাধীন চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছির গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
নিহত হুমায়ূন কবির বন্দুকছি (৩৮) শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রামভদ্রপুর গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বন্দুকছির ছেলে। শনিবার ঢাকা থেকে এনে জানাজা শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
গ্রামবাসী ও নিহতর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়ি চালক ছিলেন হুমায়ূন। তিনি ছিলেন নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা শোকে পাথর ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তার নাইম কবির (৬) নামে একটি ছেলে আছে। নাইম ৩নং রামভদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছয় বছরের ছেলে নাইমের মুখে অন্ন জোটাতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।
নিহত হুমায়ূনের স্ত্রী সিমা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, শুক্রবার ছুটি ছিল তাই আমাদের দেখতে দুপুরে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। পরে রাতের লঞ্চে শরীয়তপুরের শুরেশ্বর থেকে ঢাকা সদরঘাট রওনা দেয়। রাত ১ টার দিকে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় আমার স্বামী নিহত হন। এখন আমার ছেলে কাকে বাবা বলে ডাকবে?
নিহত হুমায়ূনের চাচাতো ভাই ফারুক বন্দুকছি বলেন, আমি ঢাকা ছিলাম হুমায়ূন ভাইর মৃত্যুর কথা শুনে তাকে লঞ্চে উদ্ধার করতে যাই। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য আমি কোনো দিন দেখি নাই। তিনি শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী মানিক-৪ লঞ্চের দোতলার ফ্লোরে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আরেকটি লঞ্চের সাথে সংঘর্ষে হলে তার দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। শনিবার সকালে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে যায়। ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হুমায়ূনের শশুর নুর মোহাম্মদ চোকদার বলেন, আমার মেয়ে ও নাতেিক রেখে হুময়ায়ূনকে আল্লাহ্ নিয়ে গেছে। পরিবারটির জন্য সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাই।
রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপ্লব সিকদার বলেন, আমি কীভাবে এঁদের পরিবারকে শান্তনা দেব, সহযোগিতা করব, সে ভাষা আমার জানা নেই। তারপরও চেষ্টা করব তাঁদের পাশে থাকতে।
এদিকে উপজেলার সখিপুর থানার চরভাগা এলাকার কৃষক ফজলুল হক ভূইয়া (৬৫) নামে একজন পা ভেঙে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সীমানাধীন চরকিশোরগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী বোগদাদিয়া-১৩ ও শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী মানিক-৪ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে হুমায়ন কবির বন্দুকছি নিহত হয়েছেন। পরে শনিবার সকাল ৮টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নেয়। এ ঘটনায় লঞ্চের অনেক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।