
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি রেজিস্ট্রি করায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া একই মামলায় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আসামি করা হয়েছে।
জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের মাধু ঢালী কান্দী গ্রামের মৃত হাকিম মাজির ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু আলী মাঝি সাম্প্রতি জাজিরা সহকারী জজ আদালতে (চিকন্দী, শরীয়তপুর) মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় এক নম্বর আসামী করা হয় জমি বিক্রেতা নাওডোবা ইউনিয়নের জৈনদ্দিন মাদবর কান্দি গ্রামের দেলোয়ার মাদবরের স্ত্রী নাছিমা বেগমকে।
দুই নম্বর আসামী করা হয় জাজিরা উপজেলা সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসানকে।
এছাড়া প্ররোচনাকারী হিসেবে আসামী করা হয়েছে জমি ক্রেতা একই ইউনিয়নের আমজাদ সওদাগরের কান্দি গ্রামের মৃত রজ্জব আলী মোড়লের ছেলে শওকত মোড়ল, মৃত আজহার আলী মোড়লের ছেলে আল মামুন মোড়ল ও মো. শফিক মোড়লকে।
মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু আলী মাঝি অভিযোগ করে বলেন, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলাধীন ১০১ নং নাওডোবা মৌজার আর.এস ৪০৮ নং খতিয়ানের ৭.৪০ একর ভূমির মধ্যে ৭০ শতাংশ নালিশী ভূমি। ইহা হতে ৬৫ শতাংশ ভূমি মেছের শিকদারের তিন ওয়ারিশ হাতেম শিকদার, মান্নান শিকদার ও সবুরা খাতুন হতে আর.এস মূলে আমি ক্রয় করেছি। যা পরবর্তীতে ঐ মৌজার এস.এ ৪৩৮ নং খতিয়ানে ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। যা ঐ মৌজার হাল বি.আর.এস ১০৫৯, ৪৮, ৭৯ খতিয়ানে অনালিশী ভুমি হিসেবে ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ বিষয়ে আমি রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেছি। বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত ওই জমি স্থিতিবস্থা বজায় রাখার দির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ ক্রয় বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেলোয়ার মাদবরের স্ত্রী নাছিমা বেগম শওকত মোড়ল, আল মামুন মোড়ল ও মো. শফিক মোড়লের কাছে ওই জমি বিক্রি করেছেন। গত ১৭ আগষ্ট জাজিরা উপজেলা সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসান জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করেন। জমি বিক্রির খবর আমি আগেই জানতে পেরে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসানের সাথে সাক্ষাৎ করে বলি ওই জমির বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে এবং বিক্রয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার নোটিশ দেখাই। সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসান আমাদের জানান যে, যেহেতু আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাই ওই জমি সাব কবলা রেজিষ্ট্রি করা হবে না। সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসানের আশ্বাস পেয়ে আমরা বিকাল ৫টার দিকে সাবরেজিস্টার অফিস থেকে বের হয়ে চলে আসি। পরে জানতে পারি রাতের বেলা সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসান নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি সাব কবলা রেজিষ্ট্রি করেন। ওই জমি যদি অন্যের দকলে চলে যায় তাহলে আমাদের বাড়ি থেকে রাস্তায় বরে হওয়ার কোন পথ থাকবেনা। উপায়ন্তর না পেয়ে আমি জমির দলিল বাতিল এবং জাজিরা উপজেলা সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসান ও ক্রয়বিক্রয়ের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার ও দলিল বাতিল দাবি করছি।
জমি বিক্রেতা নাছিমা বেগম বলেন, ওই জমি আমি আমার ভাই জাকির ঢালীর কাছ থেকে ক্রয় করেছি। ওই জমি নিয়ে কোন মামলা বা বিক্রয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল তা আমাদের জানা ছিলনা। জমি বিক্রির পরে মুক্তযোদ্ধা আবু আলী মাঝি দাবি করেন ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে এবং বিক্রয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিক্রির আগে আমরা কোন নিষেধাজ্ঞা নোটিশ পাইনি।
এ বিষয়ে জানান জন্য রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে জাজিরা উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসে গিয়ে সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসানকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কর করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। সাবরেজিস্টার অফিসের সহকারী আনোয়ার হোসেন মিল্টন জানান, সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসান স্যার জেলা শহরে গেছেন।
জেলা রেজিস্ট্রার অমৃত লাল মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাজিরা উপজেলা সাবরেজিস্টার মো. জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়ে থাকলে আদালত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। এখানে আমার কিছু বলার নেই। অফিসে পাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে বলেন, বিধি অনুযায়ী আজকে তার অফিসে থাকার কথা। জেলা অফিসেও সে আসেনি। সে কোথায় গেছে তা আমার জানা নেই।