
করোনা ভাইরাস মহামারীর কারনে প্রায় দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর রোববার ১২ সেপ্টেম্বর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার। এই খুশির দিনে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার সরকারি শামসুর রহমান ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক সহ সকল শিক্ষকরা। সকাল ৯টার সময় কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে সকল শিক্ষার্থীর হাতে একটি করে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে তাদের বরণ করা হয়। এছাড়া করোনা মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ছাত্রছাত্রীদের মাক্স পড়িয়ে দেন অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা জন্য কলেজের পক্ষ থেকে সাবান, পানি ও হ্যান্ডসেনিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়।
বৈশিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে বন্ধ থাকা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৮ মাস পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলে দেয়ায় সরকারি শামসুর রহমান ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এ সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রাজু বেপারী, সাধারণত সম্পাদক মো. মাসুৃম বিল্লাহ সহ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মী, কলেজের সকল শিক্ষক মন্ডলী ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক বলেন,
১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ ১৭ মাস আমাদের এই প্রাণোচ্ছল কলকাকলি মুখর ক্যাম্পাস নির্জিব অবস্থায় ছিল। বৈশিক মহামারী কাটিয়ে আজ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ থেকে নিয়মিত পাঠদান শুরু হলো। এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছাত্রছাত্রীদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা, তাদের নিরাপদে রাখা এবং তাদের পাঠদানে যে ব্যঘাত হয়েছে তা পুশিয়ে নেয়া। শরীয়তপুর জেলার সর্ববৃহৎ সরকারি শামসুর রহমান ডিগ্রি কলেজ সরকারের নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খ মেনে কলেজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছে। আমাদের শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্বাস্থ্যসম্মত ক্যাম্পাস ফিরিয়ে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আমার শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের নির্দেশনা মেনে তারা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কলেজে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যে সকল সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রয়োজন আমরা তা প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের শিক্ষকদের একটি টিম সার্বক্ষনিক ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি দেখা শোনা করছেন। আমরা সময় ভাগ করে তিনটি ইউনিট করেছি। এ, বি, সি। এ ইউনিটের ক্লাশ একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ভবনে হবে। এ ইউনিটের ক্লাস শেষ হাওয়ার পরেই বি ইউনিট ক্লাসে ঢুকবে। বি ইউনিটের ক্লাশ শেষ হওয়ার পরেই সি ইউনিট ক্লাসে ঢুকবে। আমরা তাদের ভবনগুলোকে আলাদা করে দিয়েছি। স্বাস্থ্য বিধি যাতে লংঘন না ঘটে। ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কলেজ থেকে বিনামূল্যে মাক্স বিতরণ করেছি। হাত দোয়ার জন্য সাবান, পানি ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছি। এই আনন্দের দিনে আমরা ছাত্রছাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করেছি। আমরা আমাদের সন্তানদের পেয়ে অনেক বেশি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। এই আনন্দঘন মূহুর্তে আমাদের অন্তর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
১৯৮৪ সালের কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন গোসাইারহাট উপজেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব আলহাজ্জ শামসুর রহমান (শাহ্জাদা মিয়া)। ১৯৯৩ সালে কলেজের গভর্নিং বডির এক সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে একজন দাতার নামে কলেজের নাম করণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরবতীর্তে গ্রণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৯৪ সনে এ কলেজ পরিচালনার আর্থিক দায়িত্বভার আলহাজ শামসুর রহমান গ্রহণ করে শামসুর রহমান কলেজ নামকরণ করেন। কলেজ পরিচালনার আর্থিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে আলহাজ শামসুর রহমান কলেজের লেখাপড়া ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি নিজ অর্থায়নে দুই কোটি পঁচাশি লাখ টাকা ব্যয় করে একটি পাঁচতলা বিশিষ্ট খলিলুর রহমান অনার্স ভবন নিমার্ণ করেন। তাঁর হাত ধরে এই কলেজে ১১ টি বিষয়ে অনার্স ও ০৪ টি বিষয়ে প্রিলিমিনারী টু মাস্টার্স এবং মাস্টার্স শেষ পর্ব চালু হয়। স্নাতক (পাস) বি.এ, বি.এস.এস, বি.বি.এস এবং বি.এস.সি কোর্স চালু হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ব্যবসায় ম্যানেজমেন্ট শাখা চালু রয়েছে। ফলে এলাকার সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় থেকে স্বল্প খরচে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে কলেজটিতে সাত হাজার শিক্ষার্থী, ৫৮ জন শিক্ষক ও ২১ জন কর্মচারী রয়েছে।
বর্তমানে সরকারি শামসুর রহমান কলেজটি একটি সমৃদ্ধশালী কলেজে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে একটি ছয়তলা বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম ক্লাস রুম। Comment vendre une voiture en panne en quelques clics
এছাড়াও রয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবন, পাঁচতলা বিশিষ্ট খলিলুর রহমান অনার্স ভবন, চারতলা বিশিষ্ট আইসিটি ভবন, কলেজ ক্যান্টিন, ছাত্রাবাস, শিক্ষক ডরমেটরি, নয়নাভিরাম মসজিদ এবং শহীদ মিনার। শিক্ষানুরাগী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৬ সালে জাতীয়করণের লক্ষ্য ২৮৩ টি কলেজ নির্ধারণ করেন। তারমধ্যে শামসুর রহমান কলেজটি তালিকভূক্ত হয়। সে মোতাবেক ২০১৮ সালে কলেজটি জাতীয় করণে গেজেটভুক্ত হয়। জাতীয় করণের পর সরকারি আদলে কলেজ পরিচালনার লক্ষ্যে প্রথম বারের মত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিসিএস ক্যাডারভুক্ত অধ্যক্ষ পদায়ন করেন। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৯ সনের ২২ অক্টোবর মো. ফজলুল হক যোগদান করেন।
তিনি যোগদানের পরবর্তীতে কলেজের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়। কলেজে ডিগ্রী পাস কোর্সের কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। কলেজের বাহ্যিক পরিবেশ নান্দনিক করার প্রয়াসে নয়নাভিরাম ফুলের বাগান, দৃষ্টি নন্দন পতাকা মঞ্চ, মুজিববর্ষের কর্মসূচি হিসেবে প্রায় চারশত বৃক্ষরোপণ করে কলেজের বাহ্যিক অবয়বে শিল্পীত পরিবর্তন আণয়ন করা হয়েছে। ইতোমেধ্য কলেজে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জীবন ও দর্শনকে সহজ এবং উন্মুক্তভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কলেজে স্থাপন করা হয়েছে “বঙ্গবন্ধু কর্ণার”।
মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়নের রোডম্যাপে শামিল হওয়ার লক্ষে গ্রহণ করা হয়েছে নানাবিধ শিক্ষা কর্মসূচি। করোনাকালিন মহা দূযোর্গ মোকাবেলা করে শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের নিদের্শনা মতে ছাত্র—ছাত্রীদের কল্যাণে অনলাইন ক্লাস, এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন সহ নানা ধরণের কর্মসূচি চালু করা হয়। Govt. Shamsur Rahman College Online Classes নামে এশটি ইফটিউব চ্যানেল খোলা হয়েছে। যেখানে নিয়মিত অনলাইন ক্লাশের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। www.gsrc.edu.bd নামে সরকারি শামসুর রহমান ডিগ্রি কলেজের ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। এখানে কলেজটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।