Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

সংসদ সদস্যদের বাড়াবাড়ি নয়, কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

সংসদ সদস্যদের বাড়াবাড়ি নয়, কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর
সংসদ সদস্যদের বাড়াবাড়ি নয়, কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

সম্মেলনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের মধ্যকার বিশৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের গণমাধ্যমে বুঝে শুনে কথা বলার পরামর্শ দেন। সংগঠনের বাইরে এমপিদের ‘এমপি লীগ’ না করে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন দলীয় সভাপতি। দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার নির্দেশও দেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহার আপডেট করতে উপকমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানান।

করোনার কারণে প্রায় এক বছর পর বৃহস্পতিবার ৯ সেপ্টেম্বর দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সভা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ সভা বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৫১ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন দু’জন। সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলের সভাপতি। পরে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং ১৫ আগস্টে নিহতসহ আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

সভায় আট সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এলাকার জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত সাংগঠনিক অবস্থার চিত্র উত্থাপন করেন। সাত বিভাগের সাত সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশে না থাকায় তার পরিবর্তে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ সভায় ওই বিভাগের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

এসব প্রতিবেদনে ২৫ জেলায় এমপিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব, কোন্দল ও উপদল গঠন করার প্রসঙ্গ উঠে আসে। জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নানা সমীকরণে এমপি মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারা দলের মনোনয়নে এমপি হন। অনেক এমপি নিয়মের বাইরে চলে যায়। কেউ কেউ দলকে তার ইচ্ছেমতো পরিচালনায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। অনেকে তৃণমূলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দেন। আবার সব কর্তৃত্ব নিতে কেউ কেউ উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, এমপিরা এমপিত্ব করবে, দলও করবে। কিন্তু খবরদারি করবে না। জেতার জন্য অনেককেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। তার অর্থ এই নয় যে, তারাও দলে খবরদারি করবেন। দল চলবে দলের গতিতে। দলের ভেতরে গ্রুপিং বা উপদল তৈরি করা যাবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলকে শক্তিশালী করতে হবে। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে।

সভায় বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় চিঠি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ায় পাবনার একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করা ২০ জন নেতাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বৈঠকে থাকা এক নেতা জানান, যারা অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বা দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করেছেন, তাদের দল থেকে একেবারে বহিষ্কার না করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেমন ভবিষ্যতে তাকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া বা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখা ইত্যাদি।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বসে যেখানে যেখানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে তা দ্রুত নিরসনের জন্য সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়। বলা হয়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে ষড়যন্ত্র তত বাড়বে। এখনই দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ দলীয় নেতাকর্মীদের দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় সভায়।

সভায় মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী কোন্দল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, মাদারীপুর কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার জেলা। এখানেই কোন্দল বেশি। নবগঠিত উপজেলা ডাসারে জেলা আওয়ামী লীগ একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে স্থানীয় এমপি ও দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের লোক না থাকায় তিনি নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। দলীয় কোন্দল নিরসনে দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মির্জা আজম।

এ সময় দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ কোনো কমিটি দেননি বলে দলীয় প্রধানকে জানান।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান অভিযোগ করেন, ‘আমি মাদারীপুর সদরের এমপি, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। সদরে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আমাকে দাওয়াত করা হয় না।’ এ সময় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মাদারীপুরে দলের একজন নেতার স্মরণসভায় নাছিমকে প্রধান অতিথি করার কার্ড দলীয় সভানেত্রীকে দেখান শাজাহান খান। একই সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে তাকে ভাগ দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেন দলের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। জবাবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘উনি (শাজাহান খান) দলীয় কর্মসূচি পালন করতে চান না। ডাকলে পাওয়া যায় না। কোনো নেতা মারা গেলে স্মরণ করতে চান না। ছাত্রলীগের সভাপতি বানাতে চান নিজের ছেলেকে। মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বানাতে চান স্ত্রীকে। অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে আত্মীয়স্বজনকে চান। উনি আওয়ামী লীগকে পারিবারিক লীগ বানাতে চান।’

এ সময় জবাব দিতে কথা বলা শুরু করেন শাজাহান খান। তবে উভয়কে থামিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। নাছিমের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (শাজাহান খান) জাসদে ছিলেন। তোমরাই তো দলে নিয়ে এসেছ। আমি চেয়েছিলাম উনি জাসদে থেকেই আমার সঙ্গে কাজ করুক।

এরপর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানকে উদ্দেশ করে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনি মুরব্বি। সবাইকে নিয়ে দলটা করবেন। রাজপথে আপনার অনেক অবদান রয়েছে। আমাদের দুঃসময়ে ছিলেন। নৌকা নিয়ে পাঁচবার এমপি হয়েছেন। আপনি কেন ভাগ চাইবেন? সব আপনারই হবে। আপনার করে নিতে হবে। আপনি যদি নাছিম, গোলাপসহ সবাইকে ডাকেন, কেউ আপনাকে ফেলে চলে যেতে পারবে? কেউই উপেক্ষা করতে পারবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, আগে আপনাকে (শাজাহান খান) আওয়ামী লীগ হতে হবে। পদে থাকলেই হবে না, আওয়ামী লীগকে ধারণ করতে হবে।

লালমনিরহাটে একজন এমপিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছিল, সেই লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং যারা এমপির ওপর চড়াও হয়েছিল তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

সভায় নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপির দ্বন্দ্ব নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। দীর্ঘদিন দুই নেতা দুই মেরুতে অবস্থান করছেন। এর আগে আবদুল কুদ্দুস অভিযোগ করেছিলেন শিমুল তাকে নাটোর শহরে ঢুকতে দেন না। এ ছাড়া শিমুলের সঙ্গে জেলার অন্য এমপিদেরও সম্পর্ক ভালো নয় বলে বিভাগীয় সাংগঠনিক প্রতিবেদনে উঠে আসে। আর আলোচনার একপর্যায়ে শিমুলের দেশের বাইরে (বেগমপাড়া) বাড়ি করার বিষয়টিও উঠে আসে।

কামাল বলেন, শহরে শফিকুল ইসলাম শিমুলের কারণে জেলা সভাপতি আবদুল কুদ্দুস সেখানে যেতে পারেন না। তাকে কেন্দ্রীয় নেতারা ফোন দিলে, কল ধরেন না। ডাকলে আসেন না। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম শিমুলের পক্ষে অবস্থান নেন।

এ সময় নাটোরে সম্মেলনের তারিখ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে শেখ হাসিনা তখন কামালকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি শিমুল বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা। জবাবে কামাল হোসেন বলেন, সম্মেলনের তারিখ হলে বাকিটা তিনি সামলে নেবেন।

নাটোরে একজন এমপি আবার জেলার কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন। সেখানে এমপিকে জেলার কমিটির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ফরিদপুরের অনিষ্পন্ন ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা কমিটির মধ্যে কোনটি আগে করা হবে এ ব্যাপারে নির্দেশনা চাওয়া হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রথম জেলা সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন।

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপির একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও সভায় আলোচনায় আসে। নাটোর ও পাবনা জেলার কোন্দল নিরসনে দ্রুত সম্মেলন দিতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। এ সময় ৬ নভেম্বর নাটোর ও ৭ নভেম্বর পাবনা জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়াও নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোকে দ্রত সম্মেলনের তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

সভায় নোয়াখালী জেলার সমস্যা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। এ বিষয়ে দলটির সভাপতির নির্দেশনা চাইলে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে নেত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জেলা সম্মেলন ছাড়া কমিটি ঘোষণার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো সম্মেলন ছাড়াই প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করছে। এ কমিটি নিয়ে অর্থনৈতিক মুখরোচক নানা আলোচনাও শোনা যায়। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন যে, একই জেলায় একজন এমপি আবার জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা হচ্ছেন। এই অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য তিনি নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, এক নেতার একটি পদ থাকবে। যিনি এমপি তিনি জেলার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এমপি জেলার দায়িত্ব পালন করার ফলে সেখানে নানা রকম বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।

সভায় দলের যে কোনো পর্যায়ে বহিষ্কারের মতো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগও করতে পারে। সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকদের বাইরে দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ ও মেরিনা জাহান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন।

দলটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বক্তৃতা করার সময় তাকে বাংলাদেশ নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দীর্ঘদিন পর সবাইকে পেয়ে আরও আলোচনা করতে চাইছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন নেতা সভা শেষের তাগিদ দিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই তোমাদের সঙ্গে থাকতে। তোমরা বাসা বাড়িতে যাবা, পরিবার নিয়ে হাওয়া খাবা। আর আমাকে গণভবনের বন্দী জীবনে রেখে যাবা।’

সভা শেষে গণভবন ফটকে সাংবাদিকদের সভার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পরবর্তী (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের বিভিন্ন উপকমিটিগুলোর সেমিনারের মাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজনগুলো পরবর্তী নির্বাচনের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। উপকমিটিগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় আমরা কী কী অন্তর্ভুক্ত করব তা তুলে ধরা হবে।

বৈঠকে আলোচিত সাংগঠনিক বিষয় তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেখানে যেখানে সাংগঠনিক সমস্যা আছে এবং যেগুলো সমাধান করা দরকার-সেগুলোর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। কিছু কিছু ছোটখাটো কলহ-বিবাদ আছে, সেগুলোও মীমাংসা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পাবনায় গত পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে অনেকেই বিদ্রোহ করেছিলেন, তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আবার উনি এটাও বলেছেন, যারা দলের ডিসিপ্লিনের (শৃঙ্খলা) বাইরে কাজ করেছেন, বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া যাবে না।

নোয়াখালীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন (আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন) আলাপ-আলোচনা করে একটা কাঠামো তৈরি করেছে নোয়াখালীর কমিটি নিয়ে। এ ব্যাপারে নেত্রীও অবহিত আছেন। স্বপন এখন দেশের বাইরে আছে। ফিরে এলে প্রকাশ করা হবে।

মির্জা আবদুল কাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেছেন, সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আপনি অব্যাহতি চেয়েছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না।’

জাতীয় সম্মেলন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয় এজেন্ডাতে ছিল না।