
লকডাউন অমান্য করে বাড়িতে হামলা, একই পরিবারের ৪ জনকে আঘাত করে জখম ও রক্তাক্ত করার ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জের সখিপুরের উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের বাগকান্দি গ্রামে।
গত ২৪ এপ্রিল শুক্রবার রাতে পদ্মা নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বাগকান্দি গ্রামের ইউসুফ বাগের ছেলে আমির হোসেন বাগ(২৪) ও একই গ্রামের আক্তার হোসেন গায়েনের ছেলে মো: শহিদুল্লাহ গায়েন(১৮)-এর সাথে কথা কাটাকাটি এবং তর্কবিতর্ক হয়। এ বিষয়টি নদীরপাড় দোকানে বসেই উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু প্রধানিয়া স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তিবর্গকে নিয়া আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করতে চাইলে ইউসুফ বাগের ছেলে আমির হোসেন বাগ তা অমান্য করে। পরে মেম্বার বাচ্চু প্রধানিয়া উভয়পক্ষকে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এরপর তারা যার যার বাড়িতে চলে যাওয়ার দুইদিন পর গত ২৭ এপ্রিল সোমবার সকালে করোনা ভাইরাসের লকডাউন অমান্য করে বে-আইনীজনতাবদ্ধে ইউসুফ বাগের ছেলে আমির হোসেন বাগ(২৪) লাঠিসোটা, লোহার রড, রামদা, ছেনদা, কাঠের রুয়া ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রসহ ১৫-২০ জনের একটি দল নিয়ে মো: শহীদুল্লাহ গায়েনের বাড়িতে হামলা করে এবং পরিবারের সকলকে এলোপাথাড়ি উলঙ্গ করে মারধর করে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে আহত করে ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মরিচ বিক্রির নগদ অর্থ লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় আহত ঐ পরিবারের সকলকে ভেদরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভেদরগঞ্জ হাসপাতাল মো: শহীদুল্লাহ গায়েনসহ তার পিতা আক্তার হোসেন গায়েন, মাতা সাহিদা বেগম ও বোন খাদিজা আক্তার, ফিরোজা আক্তারকে অবস্থা আশংকাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
এ বিষয়ে মো: শহীদুল্লাহ গায়েন বাদী হয়ে সখিপুর থানায় ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় হামলাকারী বাগকান্দি গ্রামের দিল মোহাম্মদ বাগের ছেলে নুর উদ্দিন বাগ(৪৫), রুহুল আমিন বাগ(৪৩), খাজা মোহাম্মদ বাগের ছেলে ইউসুফ বাগ(৪৮), ইউসুফ বাগের ছেলে আমির বাগ(২৪), হাবি রকমান বাগের ছেলে নুরুল্লাহ বাগ(৩০), বিল্লাল বাগ(২৮), মোস্তাকিন বাগ(২৬), সহিদ বাগের ছেলে লিটন বাগ(৪৫), নুর মোহাম্মদ বাগের ছেলে খবির বাগ(৩৫), বরকত বাগ(২৮), সখিপুর বেপারী কান্দি পাতনা দিল মোহাম্মদ বাগের ছেলে জয়নাল আবেদীন বাগ(৩০), আলামিন বাগ(২৫), ইয়াছিন বাগ(৩৮), সখিপুর আনন্দ বাজার গ্রামের নজরুল ইসলাম বাগের ছেলে সাঈদ বাগ(৩৫), নাঈম বাগ(৩০)সহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
ঘটনার বিষয়ে শহীদুল্লাহ গায়েনের পিতা আক্তার হোসেন গায়েনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে শহীদুল্লাহর সাথে ইউসুফ বাগের ছেলে আমির বাগের পদ্মানদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরা নিয়ে ঝগড়া হয়। এ বিষয়টি আমাগো ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু প্রধানিয়া সালিশ করে দিতে চাইছে কিন্তু ইউসুফ বাগের ছেলে আমির বাগ তা অমান্য করে ১৫-২০ জনকে নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে আমাকে উলঙ্গ করে ও আমার পরিবারকে উলঙ্গ করে এলোপাথাড়ি সবাইকে মারধর করে ও আমার পরিবারকে কোপ দেয়। করোনার এ মুহূর্তে আমাদের বাড়িতে এভাবে যে হামলা করলো এর উপযুক্ত বিচার আমি চাই।
সালিশ তারাবুনিয়া ২নং ইউপি সদস্য বাচ্চু প্রধানিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, পোলাপানে পোলাপানে ঝগড়া লেগেছে, পদ্মানদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরা নিয়ে। এটা আমি নদীর পাড়েই মিমাংসা করে দিতে চেয়েছি। কিন্তু ইউসুব বাগের ছেলে আমির বাগ তা অমান্য করায় দুইজনকেই যার যার বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। দুইদিন পরেই শুনি শহীদুল্লাহ গায়েনদের বাড়ি দলবল নিয়ে আমির বাগরা হামলা করে খুব মেরেছে। এর একটা উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিৎ।
এ বিষয়ে সখিপুর থানা ওসি এনামুল হক এনামকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বাগকান্দি গ্রামে আক্তার হোসেন গায়েনের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, করোনা আতঙ্কে মানুষ যখন দিশেহারা, তখন এ সকল ঘটনা আসলেই আপত্তি জনক।