
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস। যতদিন দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। এরই মধ্যে শরীয়তপুরে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৫ জন। ডামুড্যা উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় করোনার বিস্তার রোধে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে চলেছেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও ডামুড্যা থানা পুলিশ কর্মকর্তা।
রক্তপাতহীন এ লড়াইয়ে তারা দু’জনই যেন ক্লান্তিহীন। সাধারণ মানুষকে সরকারি নির্দেশনা জানাতে তাঁদের বাজার থেকে বাজার ছুটে চলা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত। এ লড়াই অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে। সমাধান ঘরে থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। তাই মানুষকে ঘরে রাখতে কখনো হ্যান্ডমাইক আবার কখনও মৌখিক বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত তারা। বল প্রয়োগে নয়, মানুষকে সচেতন করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের এই কর্মকর্তাগণ।
রাত-দিন, সকাল-দুপুর সবই যেন চলছে সমান তালে। গভীর রাত পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা ও অসহায় মানুষকে খাদ্য নিশ্চিত করতে উপজেলার বিভিন্ন কমিটির সাথে বৈঠক। ত্রাণ বিতরণ, বাজার তদারিক ও জনসমাগম প্রতিরোধসহ সকল কর্মকান্ডেই মানবিক আচরণে সর্বদা উপস্থিতি তাদের দু’জনের। একজন হচ্ছেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মামুন আব্দুল্লাহ। অপরজন ডামুড্যা থানা ওসি মো: মেহেদী হাসান রিবন। মানুষকে ঘরে রেখে অভুক্তদের খোঁজ খবর নিয়ে খাদ্য নিশ্চিত করার আপ্রাণ চেষ্টা তাদের দুজনেরই।
স্ব-শরীরে অসহায়দেরকে খাদ্য সহায়তা প্রদান, কাক ডাকা ভোরে উপজেলার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে আসেন তারা।
প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ইতোমধ্যে উপজেলায় বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখাসহ সকল কর্মকান্ডে জড়িয়ে রয়েছেন এ দুইজন। মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আপডেট সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
যেখানে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে বহু জনসমাগম ঘটে। এসব বাজারে সামাজিক দুরত্ব, শারীরিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে তাদের কাজ চলমান।
বাজারে কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রির সময়েও তাদের বাজারে মানুষদের সচেতন করতে দেখা যায়। চলতি পথে জনসমাগম দেখলেই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের না হতে সচেতন করছেন তারা। ডামুড্যা ইউএনও’র নির্দেশনায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে অসহায়, দরিদ্রদের মাঝে চালসহ খাদ্য উপকরণ বিতরণে স্বচ্ছতা রাখতে ট্যাগ অফিসারদের তদারিক করে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তাগণ।
লকডাউন বাস্তবায়ন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিদিন সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহের মোড়ে মোড়ে সার্বক্ষণিক টহল জোরদার রেখেছেন তারা।
ডামুড্যা ভূমি কর্মকর্তা জানান, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় বিদেশ ফেরত কিংবা ঢাকা-নারায়নগঞ্জ থেকে আগতদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাব যাতে এলাকায় না পড়ে সে লক্ষে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শ অনুযায়ী মানুষকে ঘরে রাখার জন্য নানামুখি প্রচার-প্রচারণা সহ ছিন্নমুল অসহায় দরিদ্রের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরও বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ বাহিরে এসে যত্রতত্র সংঘবদ্ধ হয়ে আড্ডা করছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ফোন কল, মেসেজ ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে যাচাইপূর্বক বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা উপকরণ প্রেরণ করছি। বলে যাচ্ছি আপনারা ঘরে নিরাপদে থাকুন, খাবার পৌঁছে দেব আমরা। এছাড়া প্রতি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়েছে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নেতৃত্বে।
উপজেলার গ্রামের জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সুধীজনদের মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে গ্রাম পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করার জন্য ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গঠন করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্র/কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বা বাহির হতে আসা ব্যক্তিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ডামুড্যা থানা ওসি মো: মেহেদী হাসান বলেন, আমরা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছি। সচেতনতা, অসহায়দের খাদ্যসহায়তা, ঈদসামগ্রী বিতরণ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ, করোনা রোগীর দাফন-কাফন ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে পরিবারের নিকট ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও যেতে পারছি না। বিরামহীন অভিযান করে যাচ্ছি। আমার ছেলে ‘গোল্ডেন এ+’ পেয়েছে। এ আনন্দময় মুহূর্তে তাকে সময়ও দিতে পারছি না।
#