
শরীয়তপুরের নড়িয়ার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের কাঠহুগলী গ্রামে মোল্লাবাড়ির সামনের কাচা রাস্তায় চিটা ধান দিয়ে লিখে ১৬/১৭ বছরের কিছু যুবকের টিকটক খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে মারামারি, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সোমবার ৮ জুন বিকাল ৪টার দিকে ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের কাঠহুগলী গ্রামের লিটন বেপারীর ছেলে নয়ন বেপারী, সোহরাব খানের ছেলে শাওন খান, আলী মাঝির ছেলে শাকিল মাঝি ও আলমগীর খানের ছেলে আরিফ খান একই গ্রামের মোল্লাবাড়ির সামনের কাচা রাস্তায় চিটা ধান দিয়ে লিখে টিকটক খেলাধুলা করতেছিল। ঐ রাস্তা দিয়ে নিজ কর্ম শেষ করে সাইকেল চালিয়ে আসতে ছিল একই গ্রামের আইয়ুব আলী বাছারের ছেলে রোমান বাছার। রোমান সাইকেল দিয়ে আসায় চিটা ধানের লেখা মুছে যায়। এ নিয়ে লিটন বেপারীর ছেলে নয়ন বেপারী, সোহরাব খানের ছেলে শাওন খান রোমানকে মারধর করে এবং রোমানও প্রতিরোধ করে। পরে আলী মাঝির ছেলে শাকিল মাঝি ও আলমগীর খানের ছেলে আরিফ খান ও গ্রামের অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গ মিটমাট করে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বসে মিমাংসা করার প্রস্তাব দেয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ মিমাংসায় বসলে হঠাৎ মৃত আশরাফ ঢালীর ছেলে হাসান ঢালী(৬০) বলে ওঠে টাকা যা খরচ হয় হবে, শালাদের মেরে শেষ করে দে। পরে হাসান ঢালীর লোকজন আইয়ুব আলী বাছারের ছেলে রোমান বাছার, মৃত ইয়াকুব বাছারের ছেলে আইয়ুব আলী বাছার, আইয়ুব আলী বাছারের স্ত্রী রানু বেগম, ছেলে রবিন বাছার, মেয়ে সিমলা, নুরুল ইসলাম মাঝীর মেয়ে নুরুন নাহার, মেয়ে নাজমুল ও স্ত্রী নাজমা বেগমকে লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাথাড়ি লাথিঘুষি দিয়ে মারধর করে। এ মারধরের বিষয়ে নীলচান খানের ছেলে মোতালেব খান ও মোস্তফা খান হাসান ঢালীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারাও হামলার শিকার হয় এবং তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করে। হাসান ঢালী ক্ষোভে স্থির থাকতে না পেরে ঐ দিন সন্ধা ৬টার দিকে নীলচান খানের বাড়িতে লাঠিসোটা ও অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করে নগদ টাকাসহ প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা মালামাল লুট ও ক্ষতিসাধন করে। এ হামলায় বাচ্চা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মহিলাও রক্ষা পায়নি। কিন্তু হাসান ঢালী ও তার লোকজনের ভয়ে চিকিৎসা নিতেও পারছেনা।
এ বিষয়ে রোমানকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, কাঠহুগলী গ্রামের লিটন বেপারীর ছেলে নয়ন বেপারী, সোহরাব খানের ছেলে শাওন খান, আলী মাঝির ছেলে শাকিল মাঝি ও আলমগীর খানের ছেলে আরিফ খান একই গ্রামের মোল্লাবাড়ির সামনের কাচা রাস্তায় চিটা ধান দিয়ে লিখে টিকটক খেলাধুলা করতেছিল। ঐ রাস্তা দিয়ে নিজ কর্ম শেষ করে সাইকেল চালিয়ে আমি আসতে ছিলাম। আমি সাইকেল দিয়ে আসায় চিটা ধানের লেখা মুছে যায়। এ নিয়ে লিটন বেপারীর ছেলে নয়ন বেপারী, সোহরাব খানের ছেলে শাওন খান রোমানকে মারধর করে। এ নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত হয়। মিমাংসার জন্য বসা হলেও তা না মেনে আমাদের উপর হামলা করে। এমনকি আমার আত্মীয়রা এগিয়ে আসলেও তাদের বাড়িতেও হামলা করে লুটপাট করে।
নীলচান খান বলেন, আমি পুরোপুরি ঘটনা জানতাম না। তবে শুনেছি, আমার আত্মীয় আইয়ুব আলী বাছারের ছেলে রোমানের সাথে হাসান ঢালী ও সোহরাব ঢালীর ছেলের তুচ্ছ ঘটনা খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে আমার বাড়িতে হামলা করতে আসে। আমার ছেলেরা হামলার কথা শুনে বাড়িকে রক্ষার জন্য পাল্টা আক্রমণ করলে ওদের দু-একজনের জখম হয়েছে। কিন্তু হাসান ঢালীর লোকজন এর আগেই আমার ঘরবাড়ি লুটপাট করে নগদ টাকাসহ প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে নড়িয়া থানায় বাদী হয়ে আমি হাসান ঢালীসহ ১০/১২ জনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের অভিযোগ দায়ের করেছি।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির লোকজন বলেন, আমাদের বাড়িতে হাসান ঢালী ও তার লোকজন হঠাৎ হামলা করে স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ টাকা নিয়ে যায় ও বাড়িঘর কুপিয়ে ভাংচুর করে। হাসান ঢালীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এলাকায় পাওয়া যায়নি।
ডিঙ্গামানিক ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, কাঠহুগলীতে মারামারি ঘটনার বিষয়ে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে আমি ওখানে যাই। মারামারি ঘটনা ওখানে ঘটেছে। দুজন সদর হাসপাতালে আছে।
নড়িয়া থানা ওসি হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে জানান, ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নে কোন মারামারি, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি আর কোন অভিযোগও হয়নি।