
শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায়ই গাড়ি আটকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের ১২ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার অংশ বিটুমিনের পরিবর্তে ইট দিয়ে সংস্কার করা হবে। বাকি সাত কিলোমিটার বিটুমিন দিয়ে পাকা করা হবে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের সদর উপজেলার মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জের নরসিংহপুর (আলুর বাজার) ফেরিঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নাজুক ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সড়কজুড়ে গর্ত থাকায় বৃষ্টির পানিতে ওই গর্ত কাদা ও পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছিল না। এ কারণে গত বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
জানা যায়, দুটি গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে মনোহর বাজার থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সংস্কারে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি গত ৩০ জুন ওই ১৫ কিলোমিটার সংস্কার শেষ করে। একই সময়ে নারায়ণপুর থেকে আলুর বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের জন্য একজন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আর কাজটি করতে আগ্রহী হয়নি। পুনরায় দরপত্র দিয়ে ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করার জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ইউনুুছ এন্ড ব্রাদার্স জানুয়ারি পর্যন্ত সড়কের ২৫ শতাংশ কাজ করে ফেলে রাখে। তারা সড়কের ওই অংশের ছোট-বড় গর্ত বালু ও ইট দিয়ে ভরাট করে দেয়। এ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে নেয় বলে জানা গেছে।
যানবাহন চলায় ও বৃষ্টি হওয়ায় পুনরায় গর্ত সৃষ্টি হয়। এখন ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। প্রায়ই ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে সড়কের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় সড়কের গর্তের মধ্যে একটি কাঠবাহী ট্রাক আটকে যায়। এরপর থেকেই সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাক চালকরা স্থানীয়ভাবে শ্রমিক নিযুক্ত করে শুক্রবার সকালে গর্ত থেকে আটকে পড়া ট্রাকটি টেনে তোলে। পরে ওই সড়কের গাজীপুর এলাকায় গর্তের মধ্যে পেঁয়াজবাহী একটি ট্রাক আটকে যায়। এ কারণে সড়কটিতে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে।
সওজ সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শেষ করার জন্য ৬ মাস সময় পায়। সময় শেষ হলে তারা গত ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় আরো ৬ মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করে। সময় বাড়ানো হলেও তারা আর সংস্কার কাজটি শুরু করেনি। এরপর মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল সড়কটি পরিদর্শন করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় সড়কের যে অংশগুলো নাজুক, বড় বড় গর্ত হয়েছে সেখানে ইট দিয়ে সংস্কার করা হবে। ওই অংশে প্রথমে বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করা হবে। তার উপর দুই স্তরে ইট বসানো হবে।
এ বিষয়ের প্রস্তাবনা সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ৩ জুন সওজের শরীয়তপুর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে সওজের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। সেই প্রস্তাবনায় প্রকল্প ব্যয় আরো দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
শরীয়তপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. অহিদুজ্জামান বলেন, সড়কটি ১৮ ফুট চওড়া। এটাকে দুই লেনে ২৪ ফিট চওড়া ও সোজা করা হবে। যার কারণে অন্তত পাঁচটি স্থানে বাইপাস হবে। সড়কটির জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ৮৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পাবেল মুন্সী বলেন, সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। কিছু অংশে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কাজটি বন্ধ রয়েছে। ওই সড়কের পাঁচ কিলোমিটার ইটের হেরিংবন্ড করা হবে। এ জন্য ইস্টিমেট করা হচ্ছে। ইস্টিমেট চূড়ান্ত হলেই আমরা কাজ শুরু করব।
শরীয়তপুর সওজের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার শরিফুল আলম বলেন, সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশর মধ্যে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার বিটুমিনের কাজ করা যাচ্ছে না। এ কারণে কিছু জটিলতা আছে। শিগগিরই জটিলতা নিরসন হবে। সড়কটিতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য গর্তের মধ্যে ইট দেয়া হচ্ছে। শ্রমিক সংকট থাকায় সব স্থানে কাজ করা যাচ্ছে না। তাই কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে।