
২০০৪ সালের ২১ আগস্টে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ প্রান হারান ২৪ জন। অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা। অনেকের সাথে সেই গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন বর্তমান পনিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এমপি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিলো ঢাকাস্থ জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় সেসময় শরীয়তপুরের অনেকেই এনামুল হক শামীমকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে শরীয়তপুর মাটি ও মানুষের জনপ্রিয় দৈনিক রুদ্রবার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বিশিষ্ট সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম পাইলটও এনামুল হক শামীম সহ আহত অনেককে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
সেদিনের সেই ভয়াবহ একুশে গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করে সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম পাইলট বলেন, ২০০৪ সালে একুশে আগষ্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা খবর টেলিভিশনে প্রচারের পর আমি শামীম ভাইর মোবাইল ফোনে কল করি। তখন তার মোবাইলটি রিসিভ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল। তিনি ফোন সিভিল করে বলেন, শামীম ভাই গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তার কাছ থেকে এই খবর শুনে রাতের লঞ্চেই শরীয়তপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। পরদিন সদরঘাট থেকে সকালেই বেবিটেক্সি ভাড়া করে তাকে দেখতে জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি হাসপাতাল কেবিবে হাত-পা বেন্ডিস অবস্থায় চিকিৎসাধীন দেখতে পাই। একই কেবিনে আলাদা বেড়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনিও গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি হন। শামীম ভাইর দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তার দেশের বাড়ির একই ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মো. আজিজুর হক মাদবরের ছেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান রবি। শামীম ভাই ও ওয়ায়দুল কাদেরকে ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রবি তাদের দেখাশোনা করেছেন। যেদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য শামীম ভাই, ওবায়দুল কাদের সহ অনেক নেতাকর্মীদের ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সেদিন অনেক নেতার্মীদের সাথে আমিাও তাদের বিদায় জানানে বিমান বন্দরে গিয়েছিলাম।
সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির উদ্যোগে সমাবেশ চলছিলো। সমাবেশের প্রায় শেষ পর্যায়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
একটি ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় তাকে ঘিরে পাশে ছিলেন দলীয় নেতারা। সামনে ছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ হয়।
এ হামলায় অল্পের জন্যে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনের সেই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। এর মধ্যে এখনও অনেকে দুঃসহ সেই ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। এনামুল হক শামীমের হাতে ও পায়ে এখনও গ্রেনেডের স্পিন্টার রয়েছে।
নারকীয় সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুুদন্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।