
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১০৪ নং চরভাগা আক্কাছ হাওলাদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়ামকে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডিএম আবুল হোসেন ও প্যারা শিক্ষক মো. নিরব মিয়ার বিরুদ্ধে। সিয়ামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে স্বজনেরা।
এর আগেও অনেক ছাত্রকে এভাবে মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষক ও প্যারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
আহত সিয়াম (১১) উপজেলার চরভাগা ইউনিয়নের পেদাকান্দি গ্রামের মৃত শোহরাফ হোসেন বেপারীর ছেলে। সিয়াম ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র, রোল নং ১।
শিক্ষার্থী সিয়ামের মা সাহিদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর মরনব্যধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আমার স্বামী মরা গেছেন। আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালিন সময় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নিপার সঙ্গে আমার ছেলের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার জেরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল ও প্যারা শিক্ষক মো. নিরব মিলে আমার ছেলেকে বেঞ্চ থেকে পাকা মেঝেতে ছিটকে ফেলে দেয়। কান্না করলে এলোপাথারী কিল ঘুষি মারতে থাকে। শুনে দৌঁড়ে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করি। গুরুতর আহত অবস্থায় লোকজন নিয়ে সিয়ামকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। ছেলের মাথা, তলপেটসহ সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। ওর প্র¯্রাব করতে সমস্যা হচ্ছে। আমার ছেলেকে যারা মারধর করেছে তাদের সঠিক বিচার চাই।
তিনি বলেন, ইউএনও স্যার ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
প্রধান শিক্ষক ডিএম আবুল হোসেন শিক্ষার্থী সিয়ামকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, ক্লাসে কুইজ প্রতিযোগিতা ছিল, তখন নিরব স্যার ছিলেন। শিক্ষকের কাছে প্রতিযোগিতার লিখা আগে জমা দেয়া নিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিপা ও সিয়ামের সাথে মারামারি হয়। সিয়াম নিপাকে অকর্থ ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে। আমি রাগ দিলেও শুনে না। পরে সিয়ামের মা ও তার নানাকে খবর দেই। তারা এসে ওকে নিয়ে যায়। এখন শুনি সিয়াম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমি সিয়ামকে মারধর করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
প্যারা শিক্ষক মো. নিরব মিয়া মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, কোন শিক্ষকের কথা শুনছিলনা সিয়াম। ব্যঞ্চে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছিল। তাই ওর হাত ধরে টান দিলে পাকা মেঝেতে ছিটকে পরে যায়।
ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, এ ধরনের শিক্ষকদের অমানবিক নির্যাতনের কারণে অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ছে। এর আগেও তিনি এরকম অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহাবুবুর রহমান শেখ বলেন, এ ব্যাপারে তদন্তর জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতার প্রমান পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।