
স্থানীয়, পারিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের প্রতিশোধ নিতে একটি অসহায় পরিবারকে কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রায় ২ মাস যাবত তারা কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মেম্বার চেয়ারম্যানসহ পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। অর্থবিত্ত ও জনবলে দূর্বল পরিবারটি অবশেষে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।
মামলার নথি, সাধারণ ডাইরী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর চরেরকান্দি গ্রামের সেকান্দার ফকির স্ত্রী নুর জাহান বিবি, ছেলে জব্বার ফকির, আলী মোহাম্মদ ফকির, বাদল ফকির, মেয়ে পিয়ারা বেগম ও কমলা বেগমকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যু বরণ করেন। সেই থেকে স্থানীয় সোনা মিয়া মাদবর তার ছেলে জাহাঙ্গীর মাদবর, নাতি রাসেল, নাজমুল ও মহসিনদের নিয়ে মরহুম সেকান্দার ফকিরের ওয়ারিশদের এলাকা ছাড়া করতে জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। স্থানীয় ভাবে কোন বিচার না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার থানায় সাধারণ ডাইরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ও ১৪৪/১৪৫ ধারায় মামলা করে সপক্ষে আদালতের রায় পেয়েও শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে পারছে না। অবশেষে শরীয়তপুরের যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে সম্পত্তি বুঝে পাওয়ার ঘোষণার দাবীতে দেওয়ানী ৯৩/২০১৯ নং মামলা দায়ের করে। আদালতে মামলা চলমান থাকা স্বত্বেও বিবাদী সোনামিয়া মাদবর গং জব্বার ফকিরদের বসত বাড়ির উঠানে রড-সিমেন্টের খুটি পুঁতে তাতে কাঁটাতার লাগিয়ে বেড়া দিয়ে রেখেছে। ফলে মরহুম সেকান্দার ফকিরের ওয়ারিশগণ কোন ভাবেই বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আ. জব্বার ফকির জানায়, আমাদের স্বত্ত্ব দখলীয় ২১ শতাংশ জমি থেকে বিআরএস রেকর্ডে ১০ শতাংশ জমি বিবাদীদের পূর্ব পুরুষদের নামে ভুলক্রমে রেকর্ড হয়ে যায়। সেই থেকে বিবাদীগণ আমাদের বসত বাড়ি থেকে বেদখল করতে পায়তারা চালায়। ইতোমধ্যে নালিশী জমি থেকে মূল্যবান গাছপালা কেটে নিয়ে নতুন করে ফলের গাছ লাগিয়েছে বিবাদীগণ। আমার গোয়াল ঘর ভেঙ্গে দেয়ায় আমার গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। ইতোপূর্বে তাদের পছন্দের আমিন এনে আমাদের বাড়ির উঠানে সীমানা পিলার স্থাপন করে তাতে কাঁটাতার লাগিয়ে দিয়েছে। প্রায় ২ মাস যাবৎ আমাদের বাড়ির ২০ জন লোক বাড়ি থেকে বের হতে পাারছি না। বাড়ির ছোটছোট শিশুরা খেলতে গিয়ে কাঁটাতারে আটকে যায়। আমি সঠিক বিচার না পেয়ে আদালতে মামলা করেছি। আমি ন্যাায় বিচার চাই।
বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় জাহাঙ্গীর মাদবরের সাথে, তিনি বলেন, বাদী পক্ষ অন্য এলাকা থেকে এসে আমাদের এলাকায় বসত বাড়ি করেছে। পরে আমাদের বংশের এক মেয়েকে বিয়ে করে বাদী আ. জব্বার ফকির অন্যায় ভাবে আমাদের জমি দখল করেছে। এ নিয়ে বাদী জব্বার ফকির আমাদের নামে থানায় ও আদালতে একাধিক মামলা করেছে। আমরাও বাদী হয়ে জব্বার ফকির গংদের নামে মামলা করেছি। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আমিন দিয়ে মেপে জমির সীমানা নির্ধারণ করে বেড়া দিয়েছি। এখন বাদী পক্ষ আদালতে পুনরায় মামলা করেছে। আমরা মামলা মোকাবেলা করব। আদালতের চুড়ান্ত আদেশ আমাদের পক্ষে আসবে বলে আমি আশাবাদী।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য হারুন মাদবর বলেন, উভয় পক্ষ নালিশী জমির মালিকানা দাবী করে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ-দরবার হয়েছে। কোন পক্ষই মানে না। এখন সোনা মিয়া মাদবরদের পক্ষ আমিন এনে জমি মেপে তাদের জমি আলাদা করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে।