মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

শৈল্পিক রেফারির নাম সোহাগ সরকার

শৈল্পিক রেফারির নাম সোহাগ সরকার

বাংলাদেশের জাতীয় খেলার নাম যে হা-ডু-ডু বা কাবাডি এ তথ্য আমাদের প্রায় সবারই জানা। তবে এ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো খেলাটি কখনো দেখেই নি। বিশেষ করে যাদের জন্ম শহরে এবং সেখানেই বেড়ে উঠেছে, গ্রামের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ একেবারেই নেই, তাদের ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর দেখে থাকলেও সেটি হয়েছে টেলিভিশনের কল্যাণে। টিভিতে খেলার খবরে এক ঝলক হয়তো দেখা যায়। অবশ্য এর জন্য বর্তমান প্রজন্মের দোষ নয়, এটি ক্রিয়া সংস্থার ব্যর্থতা। হা-ডু-ডু জাতীয় খেলা হলেও সেটিকে আমরা জনপ্রিয় করতে পারিনি। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি’র মতো ভিনদেশি খেলার দাপটে বেচারা হা-ডু-ডু বড়ই কোনঠাসা।
কাবাডি খেলার নাম শুনলেই গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আতকে উঠে। তার বিশেষ একটা কারনও আছে। গ্রাম অঞ্চলে কাবাডি খেলায় ঝামেলা বা মারামারি হয়নি এমন ঘটনা কমই ঘটেছে। তারপর যদি হয় কাবাডি টুর্ণামেন্ট তবেতো কথাই নেই। এই ঝামেলা বা মারামারির ভয়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে জাতীয় খেলা কাবাডি। এখন আর আগের মত পাড়ায়-পাড়ায় স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের কিংবা বড়দের কাবাডি খেলতে দেখা যায় না। তবে একজন দক্ষ, শৈল্পিক রেফারি যে তার বিচক্ষণতা দিয়ে, কোন প্রকার ঝামেলা বা মারামারি ছাড়াই সুন্দর ভাবে ম্যাচ পরিচালনা করতে পারে তা একবার নয় বারবার একাধিক টুর্ণামেন্ট পরিচালনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন সোহাগ সরকার। বর্তমানে যিনি সবার কাছে শেল্পিক রেফারি হিসাবেই বেশি পরিচিত। তার যেমন রয়েছে খেলার দক্ষতা ঠিক তেমনি রয়েছে খেলা পরিচালনা করার কর্ম-পরিকল্পনাও। দু’দলের খেলোয়াড়, টিম ম্যানাজারদের কিভাবে মন জয় করে ম্যাচ পরিচালনা করতে হয় সোহাগ সরকারের ম্যাচ রেফারিং না দেখলে এত সহযে জানতেই পারতো না স্থানীয় নতুণ প্রজন্ম।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া শরীয়তপুরের সখিপুরে ‘সখিপুর স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত হাজী নয়ন শরিফ সরকার স্মৃতি কাবাডি টুর্ণামেন্ট-২০১৯ তে নতুন করে তিনি রেফারির শৈল্পিকতা দেখিয়েছেন। পুরো টুর্ণামেন্ট জুড়ে তিনি দেখিয়েছেন রেফারির নতুনত্ব। টুর্ণামেন্টের পরপরই প্রাইমারি স্কুলগুলোতে দেখা যাচ্ছে ছোট-ছোট ছেলেরা দল বেঁধে কাবাডি খেলছে। সে দিক থেকে পিছিয়ে নেই মেয়ে শিক্ষার্থীরাও। তারাও মেয়েদের মধ্যে দুটি দল করে সদ্য সমাপ্ত টুর্ণামেন্টের সকল নিয়ম ফলো করে কাবাডি খেলছে। সোহাগ সরকারকে ফলো করে এদের মধ্যে কেউ রেফারিং করছে। আর বলছে গাছকাটা ১(এক) পয়েন্ট। গাছকাটা ১(এক) পয়েন্ট কথাটি টুর্ণামেন্টে বলেছিলেন সোহাগ সরকার। তাকেই ফলো করে রেফারিং করছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। বলা চলে এই টুর্ণামেন্টের মধ্য দিয়ে গ্রাম অঞ্চলে আবার ফিরে এলো কাবাডি খেলার প্রাণ। আর স্থানীয় তরুণ প্রজন্ম জানতে পারলো একজন শৈল্পিক রেফারি সম্পর্কে।
সোহাগ সরকার শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানায় চর হোগলা হাজি আবুল হোসেন সরকার গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রয়াত বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হাজি সফিউল্লাহ সরকার, তিনি ছিলেন পুর্ব পাকিস্তানের কিংবদন্তিকৃত হা-ডু-ডু খেলোয়াড়। বলা চলে ছোট বেলা থেকে বাবাকে অনুকরণ করেই তার খেলাতে প্রবেশ। তিনি সব সময় খেলাধুলায় মেতে থাকতেন। লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ছিলো তার অন্যতম নেশা। তিনি খেলাতে যেমন পটু ছিলেন, বর্তমানে রেফারি হিসাবেও তার ব্যতিক্রমী নয়। বর্তমানে তিনি নিজে খেলোয়াড় হিসাবে মাঠে না খেললেও ম্যাচ পরিচালনার মধ্যে দিয়ে সেই পুরনো খেলার আনন্দে মেতে থাকেন।
সোহাগ সরকার ২০১২ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের রেফারি পরিষদের সদস্য পদ লাভ করেন। ২০১৩ সালে জাতীয় রেফারি ফেড়ারেশনের সদস্য পদ পান। তিনি ২০০৯ সাল থেকেই শরীয়তপুর জেলায় বিভিন্ন এলাকায় কাবাডি টুর্ণামেন্টের ম্যাচ পরিচালনা করে আসছেন। তিনি ২০০৯ সালে এস এম লুৎফর রহমান সরকার স্মৃতি হা-ডু-ডু টুর্নামেন্ট, ২০১০ সালে চরআত্রা করিম মুন্সি স্মৃতি হা-ডু-ডু টুর্ণামেন্ট, ২০১১ সালে গুলমাইজ গোল্ড কাপ কাবাডি টুর্ণামেন্ট, ২০১৩ সালে সখিপুর এনায়েত সরদার স্মৃতি কাবাডি টুর্ণামেন্ট, ২০১৫ সালে লোংসিং ডাক্তার জলিল প্রীতি হা ডু ডু টুর্ণামেন্ট, ২০১৬ সালে পূর্ব মাদারিপুর সেলিম মিয়া স্মৃতি কাবাডি টুর্ণামেন্ট, ২০১৭ সালে গোসাইরহাটে কুচাইপট্টি চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ টুর্ণামেন্ট এবং চলতি বছর ২০১৯ সখিপুর স্পোর্টস এসোসিয়েশনের আয়োজনে হাজি নয়ন শরিফ সরকার স্মৃতি কাবাডি টুর্ণামেন্ট সফলতার সাথে পরিচালনা করেন। এই টুর্ণামেন্ট থেকে তিনি পেয়েছেন ম্যাচ পরিচালনার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। পেয়েছেন মাঠের এবং ফেসবুক লাইভে দেখা দেশি-প্রবাসী লক্ষ দর্শকের ভালোবাসা। সোহাগ সরকার লেখাপড়া, খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত ছিলেন। উপস্থাপনায় এযাবৎ তিনি দু দু বার জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। সেরা মঞ্চ উপস্থাপক হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত।


error: Content is protected !!