
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। স্থানীয় এক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি শের আলী ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার শরীয়তপুরের জজ আদালতে এই মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা প্রকৌশলস অধিদপ্তর (এলজিইডি) এডিপি’র অর্থায়নে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ২০১৮-২০১৯ গ্রহন করেছেন। সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের ১৩ জুন টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট স্থানে কালভার্ট নির্মাণ না করে ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় কালভার্ট নির্মাণ করায় স্থানীয়দের মাঝে জমি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের আদেশ অমান্য করে কালভার্ট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, এডিপি উন্নয়ন ২০১৮-১৯/০৩ প্যাকেজে ভুলক্রমে রামভদ্রপুর ৬৩নং কোড়ালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৪৩ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মানের বিষয়টি তালিকাভূক্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে কালভার্টটি নির্মিত হবে মুক্তিযোদ্ধা আ. জলিল বেপারীর বাড়ির নিকট। কালভার্টটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয় গোসাইরহাট উপজেলার হাওলাদার এন্টারপ্রাইজকে। হাওলাদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী জসিম হাওলাদার নিজে সেই কালভার্ট নির্মাণ কাজ না করে উপ-ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ডামুড্যা উপজেলার ফয়সাল ও মোকলেছ সিকদারকে। কালভার্ট নির্মাণের স্থানে মালিকানা নিয়ে ঝামেলা থাকায় প্রতিপক্ষ কালভার্ট নির্মানে বাঁধা প্রদান করেন। সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রকৌশল অফিস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিরোধ মীমাংসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। ঠিকাদারগণ ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের মতামত উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় শের আলী ও মু্িক্তযোদ্ধা আ. জলিল বেপারীর মধ্যে জমিজমা নিয়ে একাধিক মামলা মোকদ্দমা চলমান। বিরোধীয় স্থানে কালভার্ট নির্মান করতে গেলে শের আলী বাঁধা প্রদান করে। শের আলীর বাঁধা উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করেছেন শের আলী।
এ বিষয়ে শের আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা জলিল বেপারী বিদ্যালয়ের নিকট বরাদ্দকৃত কালভার্ট সরিয়ে নিয়ে আমার জমিতে নির্মাণ করতে চায়। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে অবগত করে কোন প্রতিকার পাইনি। তাই উপজেলা প্রকৌশল, সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে বিবাদী করে আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দাবীতে মামলা করেছি।
মুক্তিযোদ্ধা আ. জলিল বেপারী বলেন, আমি ২০ বছরের সাধনায় এই কালভার্টটি পেয়েছি। যে দাগে আমার বসত বাড়ি সেই দাগে ভিতরে কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। কেউ কালভার্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে পারবে না। কারণ আমি কোন অনিয়ম বা অন্যায় করি না।
উপ-ঠিকাদার মোকলেছ সিকদার বলেন, জসিম হাওলাদারের লাইসেন্সে এই কাজ পেয়েছি। আমরা কাজ শুরু করার পর সাইড ইঞ্জিনিয়ার ফোনের মাধ্যমে কাজ করতে নিষেধ করে। তাই কাজ বন্ধ রেখেছি। যেহেতু কাজের সময়সীমা ৬০দিন তাই খুব দ্রুত আমাদের কাজ শেষ করতে হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আখতার হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আ. জলিল বেপারী একটা কালভার্টের দাবি নিয়ে প্রতিদিন আমাদের অফিসে এসে বসে থাকতেন। পরে একটা দরখাস্ত দিতে বলি। মুক্তিযোদ্ধা আ. জলিলের জন্য বরাদ্দকৃত কালভার্টটি ভুলক্রমে ৬৩নং কোড়ালতলী স্কুলের নিকট লেখা হয়েছে। তালিকা থেকে তা সংশোধন করা হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধার দেখানো মতো জায়গায় কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে জানতে পারি সেটি বিরোধযুক্ত জমি। তাই বিরোধ নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে স্থাপনা স্থাপন করা যাবে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিষেধ করা স্বত্ত্বেও যদি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায় তা সে নিজ দায়িত্বে করবে। এ বিষয়ে কোন মামলা হয়েছে কি না তা আমার জানা নাই।