
শরীয়তপুর পৌরসভার আংগারিয়া বাজার সংলগ্ন কীর্তিনাশা নদী থেকে বুড়িরহাট অভিমুখী খাল খনন কাজ শুরু হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এই খাল খনন বাস্তবায়ন হচ্ছে। খাল খননে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে খালের গতিপথ পরিবর্তন করার ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারির বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ রয়েছে এই অনিয়মের সহায়তা করছেন আংগারিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও কতিপয় ব্যবসায়ী। কেউ মুখ খুললে ব্যবসায়ী নেতাদের হুমকিসহ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খাল খনন এলাকার নীলকান্দি মৌজার সোনাই দেওয়ান প্রায় ৬০ বছর ধরে যে জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন সেই মালিকানা জমিতে খাল খনন হচ্ছে। অথচ খালের জমি রয়েছে অনেক উত্তরে। একটু পূর্বে আগালেই দেখা যায় বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সহ-সভাপতি সিরাজ সরদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খালের জমি দখল করে দাড়িয়ে রয়েছে। সেই জমি রক্ষা করতে খালের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনি ভাবে খাল দখল করে নির্মিত লক্ষ্মি নারায়ন সাহা, গোপাল সাহা সহ অনেকের বহুতল ভবন রক্ষা করতে খালের গতিপথ পরিবর্তন করে নীরিহ মানুষের বসত বাড়ি ও রেকর্ডীয় জমিতে খাল খনন করছে। রেকর্ডীয় জমি ও বসত বাড়ি হারিয়ে অনেক পরিবার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে দৌড়ঝাপ করছেন।
ভুক্তভোগী সোনাই দেওয়ান বলেন, খাল খননের জন্য আমার রেকর্ডীয় জমি থেকে ৬৫ ফুট জমি ছেড়েছি। তার পরেও আমার বসত ঘর, গোয়াল ঘর ও গভীর নলকুপ খালের মাটি দিয়ে ঢেঁকে ফেলেছে। অথচ খালের জমি বাজারের ব্যবসায়ীদের দখলে রয়েছে। ঠিকাদার ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজস করে এই অপকর্ম করেছে।
বাজারের ব্যবসায়ী মহাদেব নাগ বলেন, আমাদের দুটি ভবনের ৪ ফুট করে খালের জায়গায় ছিল। সার্ভেয়ার আমার কাছে সমঝোতার প্রস্তাব পাঠায়। সার্ভেয়ারের সাথে আপোষ না করে আমি ভবনের ৪ ফুট ভেঙ্গে খালের জায়গা খালি করে দিয়েছি। অথচ আমাদের দুই ভবনের মাঝখানে গোপাল শাহার ভবন খালের জমি ৯ ফুট দখল করে আছে তা ভাঙ্গা হচ্ছে না। কোন অদৃশ্য শক্তি এই খানে কাজ করছে তা আমার জানা নাই।
বাজারের ব্যবসায়ী খাল খনন প্রকল্প সংলগ্নের বাসিন্দা শফিউল্লাহ হুজুর সহ অনেক অসহায় পরিবার আংগারিয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেও কোন সমাধান পায়নি বলে জানিয়েছেন।
বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, কার দোকান ঘর খালের জমিতে পড়েছে তার তালিকা হয়েছে। সেই অনুযায়ি খাল খনন হচ্ছে। এর মধ্যে যদি কোন অনিয়ম হয় তা বাজার ও বাজার ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই হচ্ছে। এখানে এক ব্যবসায়ী অন্য ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। আসলে এই অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই।
ঠিকাদার আবু মিয়া বলেন, আমি বিল্ডিং ভাঙ্গার পক্ষে না। যে সকল বিল্ডিং খালের ভিতরে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিসি অফিসে সেই সকল বিল্ডিং এর তালিকা দিয়েছে। খালের ভিতরে থাকা বিল্ডিং ভাঙ্গার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। খাল খননেন বিষয়ে কোন প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না। আমরা কারোর কাছ থেকে কোন সুবিধা নেই নাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে খাল পরিমাপ পরবর্তী খনন কাজ শুরু হয়েছে। খালের জমি দখল করে যে সকল স্থাপনা করা হয়েছে তার তালিকাও জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে। শুনেছি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। তখন অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা পরবে। আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে ঠিকাদার নাকি অর্থিক লাভবান হয়ে খালের গতিপথ পরিবর্তন করছে। সরেজমিন গিয়ে এই অভিযোগের কোন ভিত্তি পাওয়া যায় নাই। অনেকে ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে পারে। আমাদের অফিস বা ঠিকাদার কোন অনিয়ম করছে না।