
শরীয়তপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্টোর কিপার চুমে জাহান কালু সহকর্মী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আমির হোসেনের মাথা ফাটিয়ে বিপাকে পড়েছে। আহত আমির হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আমলে নিয়ে সিভিল সার্জন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তে দোষী হলে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনা হবে স্টোরকিপার কালুকে।
২৮ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জন সাক্ষরিত তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোস্তফা খোকনকে। সাথে থাকবেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ হাসান ও জেলা স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মাহাবুব রহমান। আগামী ৭ কার্যদিবসে বিষয়টি তদন্ত করে সিভিল সার্জন অফিসে প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ভিকটিমের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যায়ের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমির হোসেন তার কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই সময় একই কার্যালয়ের স্টোরকিপার চুমে জাহান কালু আমির হোসেনের কক্ষে গিয়ে ৫ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন দাবী করে। ভ্যাকসিন হাসপাতালের বাহিরে নিতে হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে জানায় আমির হোসেন। তখন স্টোরকিপার কালু ক্ষিপ্ত হয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমির হোসেনকে গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার দিয়ে আমির হোসেনের মাথায় বাড়ি মারে কালু। এতে আমির হোসেনের মথা ফেটে গুরুতর আহত হয়। সহকর্মীরা আমির হোসেনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালের বেড থেকে আহত আমির হোসেন জানায়, বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিন একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এই ভ্যাকসিন বাহিরে দেওয়ার কোন নিয়ম নাই। স্টোরকিপার কালু তার আত্মিয়ের জন্য ৫ ডোজ ভ্যাকসিন বাহিরে নিতে চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি আনতে বলি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ভ্যাকসিন বাহিরে দিলে দায়িত্ব পালনে অবহেলা হবে। আর এই অপরাধে আমার চাকরিও চলে যেতে পারে। কালুর কথামতো ভ্যাকসিন বাহিরে না দেওয়ায় আমাকে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। মাথায় ৫টি সেলাই লেগেছে। বিচার চেয়ে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
স্টোরকিপার চুমে জাহান কালু বলেন, আমার মামি খুব অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠতে পারেনা। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমির হোসেনের কাছ থেকে নিয়ে মামির বাসায় গিয়ে পুশ করেছি। এখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার এসএমএস পেয়ে আমির হোসেনের সাথে আলাপ করি। আমির আমাকে ভ্যাকসিন দিবে মর্মে আশ্বস্ত করে। তার কথামতো আমি মামিকে বাসায় রেখে ভ্যাকসিন আনতে যাই। তখন আমির হোসেন ভ্যাকসিন না দিয়ে আমার সাথে তালবাহান করতে থাকে। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। কিভাবে আমির হোসেনের মাথায় আঘাত লাগে আমি বুঝতে পারিনি। এটা আমার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি।
জেলা স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক হাওলাদার বলেন, সরকারী সম্পদ করোনা ভ্যাকসিন রক্ষা করতে গিয়ে সহকর্মীর হাতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নির্যাতিত হয়েছে। মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এটা গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে অপরাধীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেবন জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সানাউল্লাহ বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমির হোসেন সহকর্মীর দ্বারা গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়ে বিচার দাবী করে আবেদন করে। আবেদনপত্রটি সিভিল সার্জনের অবগতির জন্য পাঠিয়ে দেই। পরবর্তীতে এই বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. এসএম আব্দুল্লা আল মুরাদ বলেন, এই বিষয়ে একটি আবেদন পেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করি। পরবর্তীতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কার্যদিবসে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেছি। পরবর্তীতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।