Wednesday 2nd April 2025
Wednesday 2nd April 2025

ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিলেন ডাঃ গোলাম মাওলা

ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিলেন ডাঃ গোলাম মাওলা

বাংলাদেশে ভাষা সৈনিকরূপে যাঁরা খ্যাত শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান ডা. গোলাম মাওলা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ডা. গোলাম মাওলার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় ছাত্র সংসদের আহবায়ক এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের (১৯৫১-৫২) সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর ডাকেই সারা দিয়ে শরীয়তপুরে শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। নির্মাণ করা হয়েছিল প্রথম শহীদ মিনার। অথচ এই বিখ্যাত ব্যক্তির নামে নেই তেমন কোন স্মৃতিস্তম্ভ। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
জানা গেছে, ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা ১৯১৭ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের পোড়াগাছা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে এই বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। শরীয়তপুরবাসী ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলার জন্য গর্বিত। বিখ্যাত এই ভাষা সৈনিকের নামে শরীয়তপুরে দু/একটি স্থাপনা ছাড়া আর কোন স্মৃতি চোখে পড়ে না। শরীয়তপুর জেলা শহরে রয়েছে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা গণগ্রন্থাগার। তার বাড়ির নিকট ডা. গোলাম মাওলা নামে একটি সড়ক থাকলেও সেই সড়কের এখন বেহাল দশা। পৈত্রিক বাড়িতে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা স্মৃতি পাঠাগার থাকলেও সেখানে নেই কোন বই-পুস্তক। ডা. গোলাম মাওলা ছিলেন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা কালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি। ডা. গোলাম মাওলার গ্রামের বাড়ির বসতঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এসেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় যে খাঁটিয়ায় ঘুমিয়ে ছিলেন সেটিও এখন জরাজীর্ণ। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য তার স্মৃতি পাঠাগারের উন্নয়ন ও নড়িয়াতে ভাস্কর্যসহ তাঁর নামে স্থাপনা নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন দর্শণার্থী, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
দর্শণার্থী-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দাবী জানায়, ডা. গোলাম মাওলা আমাদের জেলায় জন্মগ্রহন করেছে সে জন্য আমার গর্বিত। আমরা আরও গর্বিত হই এজন্য যে, ডা. গোলাম মাওলা বাঙ্গালী জাতির জন্য বাংলা ভাষা ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। সেই বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষায় পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য ডা. গোলাম মাওলার নেতৃত্বে যে সকল যুবক বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে তাদের জানাই লাল সালাম। আমরা তাদের কাছে চিরঋণি।
আরও বলেন, তাদের স্মৃতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা প্রয়োজন। ডা. গোলাম মাওলা স্মৃতি পাঠাগারে বই-পুস্তক সরবরাহসহ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে।
ডাঃ গোলাম মাওলার নেতৃত্বে যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়, তখন তার আহবানে উজ্জীবিত হয়ে শরীয়তপুরের ছাত্ররাও ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। পাকিস্তান সরকার যখন ভাষার উপর অত্যাচার শুরু করেন তখন ডাঃ গোলাম মাওলা সংগঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। এর প্রভাব পড়ে শরীয়তপুরেও।
ডা. গোলাম মাওলার ডাকে শরীয়তপুরে ভাষা সৈনিক জালাল উদ্দিন আহমেদগণ ও আন্দোলন করেছিলেন। ভাষা সৈনিক জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডা. গোলাম মাওলার ডাকে আমরা ভাষা আন্দোলনে অনুপ্রাণীত হই। প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে ডা. গোলাম মাওলার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। আমার শরীয়তপুরে মিছিল করেছি,‘আমাদের দাবী মানতে হবে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নুরুল আমিনের ফাঁসি চাই। ১৯৫৬ সালে আমাদের দাবী মেনে নিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি দেয়া হয়।
নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য পাঠ্যপুস্তকে ভাষা সৈনিকদের নাম অর্ন্তভূক্তকরণ ও ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা স্মৃতি পাঠাগার উন্নত করার দাবী স্থানীয় শিক্ষক নেতা ও তার পরিবারের সদস্যদের। জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন রতন বলেন, যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে তাদের জীবন প্রবাহ যদি পাঠ্য পুস্তকে আনা হয় তাহলে ভাষা সৈনিকরা নতুন প্রজন্মের মাঝে বেঁচে থাকবে। নতুন প্রজন্মও তাঁদের মূল্যায়ণ করতে শিখবে।
ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলার পুত্র ডাঃ গোলাম ফারুক বলেন, আমার পিতার নামে রাজধাণীর ধানমন্ডি ১ নম্বর সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে আমার পিতাকে মরণোত্তর ২১শে পদকে ভূষিত করা হয়েছে। শরীয়তপুরে আমার পিতার নামে গ্রন্থাগার করা হয়েছে। আমাদের বাড়িতে আমার পিতার স্মৃতি পাঠাগার হয়েছে। পাঠাগারের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। তাছাড়া যে সকল ভাষা সৈনিকগণ স্থানীয় পর্যায় আন্দোলন করেছে তাদের তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী থাকবে, স্থানীয় পর্যায়ে যারা আন্দোলন করেছে তাদের তালিকাভূক্ত করে যেন মূল্যায়ন করা হয়।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের এই বিশিষ্ট ভাষা সৈনিকের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ তার স্মৃতি পাঠাগার উন্নত করার আশ^াস দিয়ে বলেছেন, ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম শরীয়তপুরবাসীর গর্ব। ভাষা আন্দোলনে ডা. গোলাম মাওলার বিশেষ ভূমিকা ছিল। তার নামে জেলা শহরে গণ গ্রহন্থাগার করা হয়েছে। তাঁর গ্রামের বাড়িতে একটা স্মৃতি পাঠাগার রয়েছে। সেই পাঠাগার সংস্কার করে বই পুস্তক সংরক্ষণ করা যেতে পারে। নড়িয়া উপজেলায় স্মৃতি ফলক স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা ১৯৬৭ সালের ২৯ মে অল্প বয়সে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।