
চাকরি ও ব্যবসার ফাঁকেই তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন অসহায় মানুষের পাশে। কারও রক্তের প্রয়োজন তো, জোগাড়যন্ত্র কাজে আছেন তাঁরা, শীতের কাঁপুনি যখন বড্ড বাড়ে, তখন তাঁদের কর্মব্যস্ততা শীতবস্ত্র বিতরণ। বন্ধুর বিপদে সাহায্যের জন্য ছুটে যান বন্ধুরা। এসব কাজের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে খুলেছেন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ।
এই দলের ঠিকানা- এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ। তাদের শ্লোগান বন্ধন দৃঢ় হোক বন্ধুত্বে। দলটি এসএসসি ২০০১ এর ব্যাচের হলেও কার্যক্রমের কারণে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠনটি এখন বাংলাদেশের অনেকের কাছেই পরিচিত।
সংগঠনের মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, এ সংগঠনে এডমিন একজন আর মডারেটর ৭জন। সারা বাংলাদেশে সদস্য সংখ্যা ৭ হাজার ২৯৬ জন। ২০১৮ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পরে তাঁরা সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেন। পথশিশু ও এতিমদের পাশে দাঁড়ান।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে মানবতার কল্যাণে নেওয়া হয়ে থাকে আরও অনেক উদ্যোগ। যেমন রমজান মাসে দুস্থদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী ও ঈদ বস্ত্র বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, অনুদান সংগ্রহে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, এতিম শিশুদের নিয়ে নানা ধরনের কর্মসূচি। সমাজসেবামূলক কাজের অংশ হিসেবে অসহায় ও দুস্থ ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জন্যও তাঁরা সহায়তা করেন।
এরই অংশ হিসেবে ২৬ অক্টোবর শনিবার বিকেলে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চরমালগাঁও গ্রামের নিহত আব্দুল গনি খানের ছেলে খোকন খানের (৩৫) অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ শরীয়তপুর জোনের বন্ধুরা। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নিহত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে গাভী কিনতে নগদ অর্থ ও সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। এরআগে খোকনের কবর জিয়ারত করে “এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ” বন্ধুরা। এ সময় শরীয়তপুর জোনের বন্ধু অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. জাকির হুসাইন, মো. সোহাগ সরদার, সোলায়মান সরদার ফাহিন, সাংবাদিক মো. ছগির হোসেন, দেওয়ান সোহাগ, মামুন, বজলু, ইমরান সুমন, মিতালী সিকদার, “এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ” এর অ্যাডমিন মোহাম্মদ মনির হোসেন এবং মডারেট সিঙ্গার রানা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, নিহত খোকন খান চরমালগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। গত ২৮ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি আইসক্রিম কারখানায় কাজ করতেন। তার আনহা (৫) নামে একটি মেয়ে রয়েছে। তাছাড়া তার স্ত্রীর গর্ভে ৮ মাসের একটি সন্তান রেখে গেছেন।
শুধু তাই নয় গত ২৫ রমজান চট্টগ্রামে ৫০জন পথ শিশুদের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ এবং ২৮ রমজান শরীয়তপুর জেলার সখিপুর মোহাম্মদিয়া এতমখানায় ১৫০ শিশুর মাঝে বস্ত্র (পাঞ্জাবী-পায়জামা) বিতরণ করা হয়। এছাড়া গত ১৫ মে মগবাজার এলাকার মিনার জাবেদের স্ত্রী মিসেস মিনারা টিউমার জনিত রোগে ভুগছিলেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। তখন চিকিৎসার জন্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন “এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ” সংগঠনের বন্ধুরা।
বাংলাদেশ মানবাধীকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান “এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ” বন্ধুদের গ্রুপটি সমাজসেবামূলক নানামুখী কাজের জন্য শরীয়তপুর জেলাসহ সারা বাংলাদেশে পরিচিতি পেয়েছে বলে তিনি আনন্দিত। তিনি বলছিলেন, সমাজের অসহায় মানুষের জন্য এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।