
এক দুইজন নয় অন্তত ১০ থেকে ১৫ জনের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানির নিচ থেকে তাদের উদ্ধার করেছেন। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছেন। অনেকেই তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তিনি হলেন শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৯টার দিকে ডামুড্যা-শরীয়তপুর সদরের সড়কের ডামুড্যা খেজুরতলা এলাকার পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায় ডামুড্যা থেকে শরীয়তপুর সদর গামী অন্তত ৩০জন যাত্রী নিয়ে একটি বাস। উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে দূর্ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছিলেন, তখন ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান মহানায়কের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা খাদের পানিতে তাৎক্ষণিক লাফিয়ে পড়েন। তার লাফিয়ে পড়া দেখে স্থানীয় লোকজনও লাফিয়ে পড়েন। তখন গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন। এতে করে সহজে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারেন। গাড়ির ভেতর আটকা পড়া ছয় নারীসহ ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেন তিনি নিজেই।
পরবর্তীতে স্থানীয় মানুষ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। সংবাদ পেয়ে একে একে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিসসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় কামরুজ্জামান মাহমুদ মুন্সী (৪৫) ও ইয়াকুব পাইক (৮০) কে উদ্ধার করা গেলেও বাঁচানো যায়নি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ডামুড্যা উপজেলা শাখার সহসভাপতি মোহাম্মদ নান্নু মৃধা বলেন, গাড়িটি খাদে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ওসি মেহেদী হাসান দ্রুত লাফিয়ে পড়েন পানিতে। তিনি প্রথমে গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন যাতে করে ভেতরে আটকা পড়া যাত্রীরা সহজে বের হতে পারে। পানির নিচে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনেন অনেক যাত্রীকে। তার বুদ্ধিবলে রক্ষা পায় বহু প্রাণ।
মনির হোসেন সাজিদ ফেসবুকে লিখেছেন, স্যালুট, ডামুড্যা থানার ওসি মেহেদী হাসানকে। (মঙ্গলবার) সকালে শরীয়তপুরের ডামুড্যার খেজুরতলায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পানিতে পড়ে যায়। খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের সাথে উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন ডামুড্যা থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান। দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল এই পুলিশ কর্মকর্তার জন্য শুভ কামনা রইলো।
স্থানীয়রা জানায়, দূর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মেহেদী স্যার যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ে যাত্রীদের উদ্ধার করেন তা অবিশ্বাস্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা পানিতে নামেন। এ বীরত্বের জন্য উপস্থিত হাজারো মানুষ তাকে তথা পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন মোবাইল ক্যামেরায় মেহেদী’র ছবি তুলতে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে মেহেদী হাসানরে বীরত্বপূর্ণ কাজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফেসবুকে অনেকেই মেহেদীর এ কাজের জন্য তার পদোন্নতি, পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা উচিৎ জানান।
ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, যারা দূর্ঘটনায় কবলিত হয়েছে তারাতো মানুষ। মানুষতো মানুষের জন্য। সেই চিন্তা করেই ঝাপিয়ে পরি যাত্রিদের বাঁচাতে। এটাতো আমার কর্তব্য ছিল।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) মো. মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, যাত্রীদের জীবন বাচাতে আমাদের মেহেদী হাসান ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা পুলিশ বিভাগের জন্য সত্যিই প্রশংসনীয়।