
আদমশুমারী অনুযায়ী শরীয়তপুরের মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক শূন্য এক ভাগ জনগোষ্ঠী খ্রিষ্ট ধর্মানুসারী। তারা কর্মসুত্রে বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে এসে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। তবে জেলায় এ ধর্মাবলম্বীদের জন্য নেই কোনো গির্জা। প্রতিবছর বড়দিনকে ঘিরে তারা সরকারি ছুটি পেলেও, মেলেনা মাসব্যাপী নিজেদের আচার অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ। বড়দিনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করতে, একটি গির্জা তৈরির দাবী জানিয়েছেন এ ধর্মানুসারীরা।
শরীয়তপুরে বসবাসকারী খ্রিস্টান ধর্মানুসারীদের মধ্যে জেনিভী গোলদার (২৭) একজন। তিনি পৈত্রিক বাড়ি বরিশাল জেলার শিকারপুর এলাকায়। তার বাবার নাম সুনিল গোলদার। পেশায় সেবিকা (নার্স) হওয়ায় দুই বছর ধরে জেনিভী গোলদার বসবাস করছেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় । বড়দিন আসলে সরকারি ছুটি পেয়ে স্বজনদের কাছে যান ধর্মীয় আচার পালনসহ আনন্দ ভাগাভাগি করতে। কিন্তু ছুটির একটি অংশ যাওয়া-আসায় যাত্রাপথেই কেটে যায় তার। খ্রিষ্ট ধর্মের ক্যাথলিক অনুসারী হওয়ায় নিয়মিত গীর্জায় প্রার্থনাসহ ফাদারের দিকনির্দেশনা পালন করার কথা তার। কিন্তু জেলায় কোনো গীর্জা না থাকায় এর কোনোটাই হয়ে ওঠে না তার। এছাড়াও খ্রিষ্ট ধর্মের পবিত্র দিন রবিবারের প্রার্থনাও করতে পারেন না তিনি। তবে বাসায় বাইবেল পাঠসহ অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালন করেন তিনি।
জেনিভী গোলদার বলেন, বড়দিন আমাদের ধর্মের মানুষের জন্য সবচেয়ে পবিত্র দিন। যেসব অঞ্চলে খ্রিষ্টের অনুসারী সংখ্যায় বেশি সেসব অঞ্চলে ডিসেম্বর মাসব্যাপী প্রার্থনা, কীর্তন, বাইবেল পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া হয়, বিভিন্ন উপহার আদান প্রদান হয়। কিন্তু এখানে ঈদ বা পূজো আসলে অন্যান্য সহকর্মীদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করতে দেখতে পেলেও বড়দিনের কোনো উৎসবের আমেজ পাই না। বিষয়টি নিয়ে খুবই খারাপ লাগে। যদি এই জেলায় ছোট পরিসরেও একটি গীর্জা থাকত, তাহলে আমার মত যারা রয়েছেন তারা একত্রিত হয়ে আনন্দ সহকারে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারতেন।
জেনিভী গোলদারের মতোই আরেক খ্রিষ্ট ধর্মানুসারী স্কুল শিক্ষার্থী ডন গোলদার। তিনি তার পরিবারের সাথে থাকছেন শরীয়তপুরে। তিনি বলেন, শরীয়তপুর হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের প্রার্থনার জন্য মন্দির, মসজিদ থাকলেও খ্রিস্টানদের প্রার্থনার জন্য কোনো উপাসনালয় নেই। তাই এখানে বড় দিনের উৎসবে তেমন কোনো জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়না। যদি আমাদের ধর্মের মানুষের জন্য জেলায় একটি গির্জা করে দেয়া হতো তাহলে বড়দিনে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে প্রার্থনার সুযোগ পেতাম।
অর্চনা ডি. কোস্টা নামের আরেক খ্রিষ্ট ধর্মানুসারী বলেন, প্রতি রবিবার আমাদের জন্য পবিত্র দিন। এইদিনে আমাদের ধর্মের লোকজন সবাই গির্জায় একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করে থাকে। তবে এখানে আমাদের জন্য কোনো গির্জা না থাকায় বাসায় বসেই প্রার্থনা করি। আমাদের একটাই দাবী, আমাদের প্রার্থনার জন্য এই জেলায় একটি গির্জার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক।
এ বিষয়ে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষ রানা বলেন, প্রত্যেকটি জেলায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয় হওয়া উচিৎ। আমরা পূর্ব থেকেই সরকারের কাছে এমন দাবী জানিয়ে আসছিলাম। কর্মসূত্রে বা জন্মসুত্রে যে যে জেলায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করছেন প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জন্য সরকারিভাবে প্রতিটি জেলায় উপসনালয় করার দাবী জানাই।
জানতে চাইলে জেলার হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শংকর চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলায় মুসলিম ধর্মের মানুষের জন্য মডেল মসজিদ করেছেন। আমরাও চাই হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্যও আলাদা আলাদা উপাসনালয় করা হোক। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।