সোমবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং, ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সোমবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং

গোসাইরহাট উপজেলায় ইউনিয়ন মেম্বারের পরকিয়ার জেরে স্ত্রী নির্যাতিত

গোসাইরহাট উপজেলায় ইউনিয়ন মেম্বারের পরকিয়ার জেরে স্ত্রী নির্যাতিত

গোসাইরহাটের গরীবের চর (আলাউলপুর) ইউনিয়নের গাজী কান্দি গ্রামের সিরাজুল গাজীর ছেলে ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার সালাউদ্দিন গাজী (৪৫) একই এলাকার মুজিবর গাজীর স্ত্রী লাইলী বেগমের সাথে পরকিয়ার জেরে তার বিবাহিত স্ত্রী সালমা বেগমকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয় নিয়ে নিজ এলাকা, ইউনিয়ন পরিষদে, থানায় ও কোর্টে একাধিক মামলা ও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী চরিত্রহীন ঐ মেম্বারের উপযুক্ত কোন বিচার কেউ করতে পারেনি। জানা যায়, বৈঠক বসে স্ত্রীর সাথে আপোষ করে মামলা উঠিয়ে নিয়ে পূর্বের মতোই ঐ পরকিয়ার কারনেই সালমা বেগমকে মেম্বার সালাউদ্দিন নির্যাতন করতে থাকে।
এ বিষয়ে নিলকমল মাঝেরচর পেদাকান্দি সানাউল্লাহ পেদার মেয়ে ও সালাউদ্দিন মেম্বারের নির্যাতিতা স্ত্রী সালমা বেগম (২৮) বলেন, গত ২০০৭ সালের ৮ জুলাই সালাউদ্দিন গাজীর সাথে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। আমার বাবা বিয়ের যাবতীয় স্বর্ণালংকার ও সরঞ্জামাদী দিয়ে আমাকে বিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের বিয়ের পূর্বে থেকেই এই গ্রামের মুজিবুর গাজীর স্ত্রী লাইলী বেগমের সাথে আমার স্বামী সালাউদ্দিন পরকিয়া সম্পর্কের কারনে ঐ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো এবং অবৈধ মেলামেশা করতো এবং এখনো করে। মুজিবুর গাজী বিদেশ থাকাকালীন সময় সালাউদ্দিনের অবৈধ সম্পর্কে লাইলী বেগমের ঔরষে বৃষ্টি নামের মেয়েটি জন্ম হয়। বিয়ের পরে উক্ত বিষয়ে আমি জানতে পেরে ঐ বাড়িতে সালাউদ্দিনকে যেতে নিষেধ করলে, সে আমার প্রতি নানা নির্যাতন করত আর বলতো, তোকে ছাড়তে পারবো, কিন্তু লাইলী বেগম ও বৃষ্টিকে ছাড়তে পারবো না। ওদের জন্য টাকা-পয়সা নষ্ট করে ফেলে। বাপের বাড়ি থেকে দোকান করার জন্য ১ লক্ষ টাকা এনে দিয়েছি। মেম্বার নির্বাচনের জন্য নিজের ৪ লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকারসহ বাপের বাড়ি থেকে নগদ ৩ লক্ষ টাকা এনে দিয়েছি। যাতে সে আমার প্রতি টান ও ভালোবাসা আসে। কিন্তু তার কোন পরিবর্তন আসছে না। এমতাবস্থায়, আমি আমার স্বামীকে উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে ফিরে পেতে চাই। আমার ১১ বছর বয়সের ইমরান বাদশা ও ৩ বছর বয়সের সাদিক আহম্মেদ নামে দু’টি সন্তান আছে। ওদের জন্যই স্বামীকে ফিরে পেতে স্বামী সালাউদ্দিন গাজীসহ সেরাজুল গাজী ও মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে শেষ বিচারের আশায় ২৪৮/২০১৮ (গোসাইরহাট) সি.আর কোর্টে মামলা করেছি, যাতে উপযুক্ত বিচার পাই।
গরীবের চর (আলাউলপুর) ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বাচ্চু বেপারীর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সালাউদ্দিন গাজীর চরিত্রে গন্ডগোল আছে। অন্যান্য বিষয়ে বলতে চাই না। ঐ চারিত্রিক বিষয় নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে সালাউদ্দিন গাজীর একাধিক বৈঠক সালিশ হয়, কিন্তু উপযুক্ত বিচার না হওয়াতে স্ত্রীর প্রতি তার অমানুষিক নির্যাতন এখনো চলমান।
একই গ্রামের কাকন গাজী, জনী গাজী ও মনির গাজীকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আমরা এ বিষয়ে জানি এবং গ্রামের সকলেই সালাউদ্দিন গাজী ও তার স্ত্রীর দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানে। তারা প্রায়ই মারামারি ঝগড়াঝাটি করে। এ বিষয়ে অনেকবার সালিশ-দরবার ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। কিন্তু সালাউদ্দিন মেম্বার আপোষ করে মামলায় খালাস পেয়ে আবার তার স্ত্রীর প্রতি নির্যাতন করতে থাকে। কি কারনে এ নির্যাতন করে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানালেন, মুজিবুর গাজীর স্ত্রী লাইলী বেগমের সাথে সালাউদ্দিন মেম্বারের একটি অবৈধ সম্পর্ক আছে। ঐ অবৈধ সম্পর্কে জন্মলাভ করে বৃষ্টি নামে একটি মেয়ে। এ কথা গ্রামের সবাই জানে। উক্ত বিষয় নিয়ে সালাউদ্দিন গাজির স্ত্রী সালমা বেগম সালাউদ্দিনকে মুজিবুর গাজীর বাড়িতে যেতে নিষেধ করলেই সালমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এজন্য কাকন গাজী, জনী গাজী ও মনির গাজীসহ গ্রামের অনেকেই জানালেন, সালাউদ্দিন গাজী, লাইলী বেগম ও বৃষ্টির ডিএনএ পরীক্ষা করলেই তো আসল সত্যতা বেরিয়ে আসবে। এবং এ নির্যাতন ও ঝগড়ার অবসান ঘটবে।
সালমা বেগমের মামা কোদালপুরের মাছ ব্যবসায়ী আবুল কালাম দেওয়ান বলেন, আমার ভাগ্নী সালমা অত্যন্ত ভালো মেয়ে। আমরা শুনতাম, তার স্বামী সালাউদ্দিন তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। গত দেড়-দুই মাস আগে সালমা তার স্বামী সালাউদ্দিনের নির্যাতনের জন্য তার স্বামীর বিরুদ্ধে গোসাইরহাট থানায় একটি ডায়েরি করলে, সালাউদ্দিন গাজীর বাড়ির লোকজন সালমার উপর নির্যাতন করে। তখন আমি খবর শুনে লোকজনকে সামনে রেখে আমার ভাগ্নী সালমাকে ওখান থেকে নিয়ে আসি এবং বিষয়টি গোসাইরহট থানার এসআই রাকিবকে জানাই। এসআই রাকিব আমাকে মামলা করার পরামর্শ দেন। আমরা তাকে মিমাংসা করার জন্য অনুরোধ জানাই।
গরীবের চর (আলাউলপুরের) চেয়ারম্যান ওসমান গণীকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে বলতে চাই না। বিচার গোসাইরহাটের আওয়ামীলীগ নেতা মাঈনুদ্দিন পেদা ও এস আই রাকিব জানে তাদের জিজ্ঞাসা করেন।
মাঈনুদ্দিন পেদাকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করতে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
গোসাইরহাট থানার এস আই রাকিবকে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, আমাকে সালমা বেগমের মামা আবুল কালাম দেওয়ান ও সালমা বেগম সালাউদ্দিনের চারিত্রিক বিষয় ও সালমা বেগমের উপর নির্যাতনের কথা অবগত করলে ঐ এলাকায় তদন্তে যাই, মৌখিকভাবে এলাকা থেকে জানতে পারি, সালাউদ্দিন মুজিবুর গাজীর বাড়ি যাতায়াত করে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে এর কোন সত্যতা পাইনি। তবে আমি গাজী কান্দি এলাকায় বলে এসেছি যে, সালাউদ্দিন গাজীকে মুজিবুর গাজীর বাড়ি দেখতে পেলেই আমাদের জানালে আমরা গিয়ে ব্যবস্থা নিব।
সালাউদ্দিন মেম্বারকে স্ত্রী নির্যাতন ও পরকিয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নির্যাতন করি না এবং লাইলী বেগমের সাথে আমার কোন অবৈধ সম্পর্ক নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী আমাকে সন্দেহ করে আমার শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। লাইলী বেগম আমার ধর্মের বোন। ঐ বাড়িতে আমি যাই না, খাই না, এমনকি থাকিও না। তাহলে অবৈধ সম্পর্ক থাকবে কেন? থাকলে প্রমাণ করে দেখাতে বলেন।


error: Content is protected !!